ফুটবল
এখন মাঠে
0

আলবিসিলেস্তেদের অন্যতম হৃদস্পন্দন ডি মারিয়া

বিশ্বের অনেক স্ট্রাইকার, ফুটবলারদের মতো পেশিবহুল চেহারা নয়। লিকলিকে গড়ন, বড় কান, গোল গোল চোখ- বরাবরই এমনই ছিলেন তিনি। কিন্তু মাঠে নামলে উইং ধরে বল পায়ে তার ভোঁ দৌড়, গোল করা এবং করানোর দক্ষতা চোখ জুড়ায়নি এমন সমর্থক পাওয়াও কষ্টসাধ্য। গোল করবার পর বুকের কাছে আঙ্গুলগুলো দিয়ে হৃদয় একে দৌড় দেন তিনি। যা কিনা আক্ষরিক অর্থেই প্রমাণ করে যে তিনি আলবিসিলেস্তেদের অন্যতম হৃদস্পন্দন। তিনি আর কেউ নন- অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া।

২০০৮ অলিম্পিকের পর থেকেই এই ডি মারিয়া-মেসিদের আগের দিনগুলো ছিল পুরোপুরি হতাশার। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে চোটের কারণে খেলতে না পারা। ২০১৫ ও ২০১৬ কোপায় ফাইনালে হেরে যাওয়া  এমনকি ১৯৯৩ কোপা আমেরিকার পর যে, আর কোনো শিরোপাই জিততে পারছিল না আর্জেন্টিনা। ডি মারিয়া ও মেসিরা অবশেষে দীর্ঘ সেই শিরোপা খরা কাটিয়েছিল ২০২১ সালে ব্রাজিলের মাটিতে ডি মারিয়া ব্রাজিলকে হারিয়েই কোপা আমেরিকার শিরোপার জিতে। এরপর স্বপ্নের বিশ্বকাপে মারিয়ার বিদায়ের মঞ্চটি নির্ধারিতই ছিল। আর সেখানেই তার সতীর্থরা হতাশ করেনি। 

বিশ্বকাপে মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত 

চোট পেয়ে যখন মেসি মাঠ ছেড়ে ডাগ আউটে গিয়েছেন, অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনীটি দিয়েছেন শেষ ম্যাচে খেলতে নামা বন্ধু ডি মারিয়ার কাছেই। আর বাহুবন্ধনী হাতে নিয়েই শিরোপা নির্ধারণী গোল হতে দেখেছেন মাঠে। দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছেন বাল্যবন্ধু মেসিকে। 

মেসির সাথে তার বন্ধনটা যেন আত্মিক। আকাশী নীল জার্সিতে লিওনেল মেসি ও অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার ক্যারিয়ার প্রায় একই সময় শুরু। দুইজনের ক্যারিয়ারে আক্ষেপের পাল্লাও ছিল সমান ভারী। ডি মারিয়া সব হিসাবনিকাশ চুকিয়ে দিয়েছেন মেসির সঙ্গেই। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে আর্জেন্টিনার হয়ে জিতেছেন সব শিরোপাই। জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন অলিম্পিক স্বর্ণ, কোপা আমেরিকা, বিশ্বকাপ ও ফিনালিসিমা। করেছেন শিরোপা নির্ধারণী সকল ম্যাচে গোলও। তাই অপ্রাপ্তির আর কিছুই নেই মারিয়ার। 

ক্লাব ফুটবলে ডি মারিয়। ছবি: সংগৃহীত 

রোজারিও সেন্ট্রেয়াল এর দ্বিতীয় বিভাগ ও প্রথম বিভাগ ঘুরে ১৯ বছর বয়সে বেনফিকাতে দিয়ে ইউরোপের ক্লাবে পদার্পণ। ৩ বছর পরেই রিয়াদ মাদ্রিদের ফ্লোরিন্তিনো পেরেজ জহুরির চোখ দিয়ে চিনে ফেলেন তাকে। তাইতো সাড়ে ৯ মিলিয়ন ইউরোর খেলোয়াড়কে ৩৩ মিলিয়ন দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে যেতে দ্বিধাবোধ করেননি।  এরপরে তিনি হয়ে যান রিয়াল মাদ্রিদের স্বপ্নের লা ডেসিমা জয়ের অন্যতম সারথী। 

যদিও ৪ বছর বাদে ৭৫ মিলিয়ন ইউরোতে তিনি পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। আর সেটিও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। যদিও সেখানে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এরপর প্যারিস ও ইতালির জুভেন্টাস ঘুরে ফিরেছেন কৈশরের ক্লাব বেনফিকাতেই। এখন পর্যন্ত তার ট্রান্সফার ফি ঠেকেছে ১৭৯ মিলিয়ন ইউরোতে। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ আয় করা খেলোয়াড় তিনি। 

জাতীয় দলে ডি মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত 

১৬ বছরের ক্যারিয়ারে আর্জেন্টিনার হয়ে রোববার পর্যন্ত ১৪৫টি ম্যাচ খেলেছেন ডি মারিয়া। গোল করেছেন ৩১টি। এর মধ্যে তিনটি গোল লেখা থাকবে ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে তার একমাত্র গোলে শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা, এরপর ২০২২ সালে লা ফিনালিসিমা আর ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালেও করেছেন দুটি গোল।

ভাগ্যদেবী শেষ ফাইনালে তার পায়ের গোল হয়তোবা চাননি। আর তাই তো অতৃপ্তির জায়গা থাকতেই পারে। কিন্তু কজনই বা পারে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিদায় নিতে? ডি মারিয়াদের মতো চ্যাম্পিয়নদের বিদায় হয় না। তাদের ধন্যবাদ জানাতে হয়।

ধন্যবাদ ডি মারিয়া, দেবদূত হয়ে এসে, সহস্র আক্ষেপ মুছে দিয়ে, আর্জেন্টিনার স্বপ্নের রথকে গন্তব্যের পথ দেখানো 'অ্যাঞ্জেল'।

ইএ