অর্থনীতি , পরিষেবা
বিশেষ প্রতিবেদন
0

অপারেটরদের অনিহায় ৬ বছরেও পূর্ণতা পায়নি মোবাইল টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালা

মোবাইল টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালা গত ৬ বছরেও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। মোট টাওয়ারের মাত্র ৪৫ শতাংশ গিয়েছে শেয়ারিংয়ের আওতায়। অপারেটররা বলছে, ফাইবার অপটিকের মাধ্যমে অধিকাংশ টাওয়ার সংযোগ না থাকায় শেয়ারিংয়ের আওতায় যেতে তাদের অনীহা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতিমালা বাস্তবায়নে বিটিআরসির নেই নির্দিষ্ট কোনো সময়, এতেই সুযোগ নিচ্ছে মুঠোফোন অপারেটররা।

মোবাইল অপারেটর সেবায় আরো গতি আনতে টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালা করে সরকার। লক্ষ্য ছিল জমির ব্যবহার ও অপারেটরগুলোর খরচ কমানো এবং সেবার মান বৃদ্ধি। এর জন্য ২০১৮ সালের ১লা নভেম্বর ইডটকো, সামিট, কীর্তনখোলা এবং ফ্রন্টিয়ার নামে চার প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয় বিটিআরসি। কিন্তু গত ৬ বছরেও প্রায় ৫৫ শতাংশ টাওয়ার যায়নি শেয়ারিংয়ের আওতায়।

টেলিডেনসিটি অনুযায়ী, প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্ততপক্ষে প্রতি অপারেটরের একটি করে টাওয়ার করে থাকার কথা। সে হিসেবে চার অপারেটরের টাওয়ার হবে প্রায় ২ লাখ। কিন্তু টাওয়ার ও নেটওয়ার্ক শেয়ারিংয়ের কারণে টাওয়ারের প্রয়োজন বর্তমানে ন্যূনতম এক লাখ। কিন্তু গত অক্টোবরে বিটিআরসির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট টাওয়ার রয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার ৯৩৪টি, যা চাহিদার মাত্র ৪৫ শতাংশ। এছাড়া টাওয়ার শেয়ারিংয়ের আওতায় এসেছে মাত্র ২৩ হাজার ৮শ ১৩টি, মোবাইল অপারেটরদের হাতে রয়েছে ২২ হাজার ১২১টি টাওয়ার।

প্রতিষ্ঠানগুলোর টাওয়ার সংখ্যা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, জিপির অধীনে সাড়ে ১২ হাজার, রবির ২ হাজার, বাংলালিংকের ৪ হাজার এবং টেলিটকের রয়েছে ৩ হাজারটি টাওয়ার। আর শেয়ারিংয়ের আওতায় ইডটকো লিমিটেডের ১৬ হাজার, সামিটের ৪ হাজার, কীর্তনখোলার ৮০৩, ফ্রন্টিয়ারের ৯৩১ এবং বিটিসিএলের টাওয়ার রয়েছে মাত্র ৫১৪টি।

সব টাওয়ার ফাইবার অপটিকে কানেক্টেড না হওয়ায় ফাইভ জিসহ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাঁধা হতে পারে বলে মনে করে গ্রামীনফোন। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, যদিও বড় অংশ টাওয়ার কোম্পানিগুলোর অধীনে দিয়ে দেয়া হয়েছে, তবে মোবাইল অপারেটররা টাওয়ার করতে চাইলে তাদেরও সে সুযোগ রাখা উচিত।

গ্রামীনফোনের অ্যাফেয়ার্স অফিসার চিফ কর্পোরেটের তানভীর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের যে পরিমাণ স্পিড দরকার সে পরিমাণ হচ্ছে না। ভবিষ্যতে আমরা যখন আর বেশি ডেটা ভলিউম নিয়ে কথা বলবো তখন প্রত্যেকটা সাইটে ফাইবার কানেক্টিভিটি নিয়ে কথা বলবো।’

মোবাইল গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বলছে, শুধু বিটিআরসির যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালা কার্যকর হচ্ছে না।

মোবাইল গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সামিটের কথা বলি তার এখন ইনভেস্ট করবে কি করবে না এইটা নিয়ে ভাসমান অবস্থায় আছে। বাকি দুইটি টাওয়ার ইনভেস্ট কোম্পানি শেয়ার ইনভেস্ট করতেই পারছে না। টাওয়ার ও নেটওয়ার্ক শেয়ারিং এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এখন।’

খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল অপারেটর ও টাওয়ার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট টাইমলাইন বিটিআরসির তরফ থেকে না দেয়ায় টাওয়ার শেয়ারিংয়ের নীতিমালা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।

টেলিকম খাত বিশেষজ্ঞ টি. আই. এম. নুরুল কবির বলেন, ‘বাজার অর্থনীতিতে এখানে কাউকে আটকে রেখে বা কাউকে চাপ দিয়ে করানোর চাইতে এইটাকে কম্পিটিশনের মধ্যে নিয়ে আসা উচিত।’

ইএ

আরও পড়ুন:
এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর
No Article Found!