সংকটের কিনারে চা শিল্প; হিমশিম খাচ্ছেন বাগান মালিকরা

চা বাগান, চা শ্রমিক | ছবি: এখন টিভি
1

বাংলাদেশের চা শিল্প এখন অনেকটাই সংকটের কিনারে। ব্যাংক থেকে অর্থ সহায়তা না পাওয়া, উৎপাদন খরচ ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক বছরে বাগানগুলোতে লোকসান হওয়ায় চা শিল্প টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন বাগান মালিকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অন্যান্য শিল্পখাতের মতো চা শিল্পেও সরকারের বিশেষ নজর না দিলে ভবিষ্যতে আরও সংকটে পড়বে এ খাত।

গত কয়েক বছর থেকেই সিলেটের চা বাগানগুলোতে চলছে নানান অস্থিরতা– বিশেষ করে ধারাবাহিকভাবে চায়ের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে প্রতিনিয়তই লোকসান গুণতে হচ্ছে বাগান মালিকদের। এছাড়া শ্রমিক অসন্তোষ আর ব্যাংক থেকে আর্থিক সহায়তা না পাওয়াসহ নানান কারণে এখন সিলেটের বেশিরভাগ চা বাগানই বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বাগান মালিকরা বলছেন, ধীরে ধীরে বিনিয়োগের অভাব আর বাজার অস্থিরতায় তীব্র সংকটের মুখে তারা।

মেক্সান ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক এম এ জামান সোহেল বলেন, ‘বাগান ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের মজুরি দেয়া সবচেয়ে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ আমার চা বিক্রি করে তো লস হচ্ছে। আমার পেষানো যাচ্ছে না।’

সিলেট নিনা আফজাল ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেডের প্রধান পরিচালক আফজাল রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে চায়ে ম্যানুফ্যাকচারিং খরচ প্রায় ২২৫ থেকে ২৩০ টাকা। কিন্তু চা গড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা।’

বাংলাদেশিয় চা সংসদের চেয়ারম্যান বলছেন, এ শিল্প না থাকলে শুধু বাগান মালিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং বিশাল জনগোষ্ঠী বেকার হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের আর্থিক খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশিয় চা সংসদের চেয়ারম্যান কামরান তানভীরুর রহমান বলেন, ‘চা শিল্পের একটা ক্রান্তি লগ্ন। কিন্তু কীভাবে এর থেকে আমরা উত্তোলন পাবো? উত্তোলন পেতে হবে। যদি উত্তোলন না পাই তাহলে তো এ শিল্প আর থাকবে না। এ শিল্প যখন থাকবে না বহু মানুষ বেকার হয়ে যাবে।’

দেশের চায়ের প্রকৃত অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভঙ্গুর বাজার ব্যবস্থার কারণেই এ শিল্প এখন হুমকির মুখে। সেজন্য চায়ের দাম বৃদ্ধিসহ পণ্যটিকে রপ্তানিমুখী করার পরামর্শ দেন তারা।

আরও পড়ুন:

শ্রীমঙ্গল ব্রুকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ এস এম ইসলাম মুনীর বলেন, ‘ইন্টারনাল কনজ্যুম বেড়েছে ঠিক আছে কিন্তু রপ্তানিতে যদি না যাওয়া হয় তাহলে কিন্তু দাম বাড়বে না। এরইমধ্যে জানা গেছে যে, সিওপি বেড়ে গেছে, এটা যদি মিনিমাইজ করতে হয় তাহলে দাম ভালো পেতে হবে।’

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ বোটানি এন্ড টি প্রোডাকশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের যে চা বাগানগুলো আছে তাদের সমস্যাটা কোথায়? বাগান মালিকরা কেন নতুন নতুন প্রযুক্তি নিচ্ছে না। কারণ তাদের সমস্যাটা আগে বের করতে হবে। তারপর তাদের পলিসি সাপোর্ট হতে পারে, ঋণ সাপোর্ট হতে পারে, যেভাবে যে সম্ভাব্য সাপোর্টটা দেয়া দরকার এটা দিতে হবে।’

বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, এ শিল্পের দৈনদশা থেকে বের হতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ মিলে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আমার মনে হয় বাগান মালিক যারা আছেন বা যারা এ ব্যবসার সঙ্গে আছেন তাদের আরেকটু সহনীয় হওয়া দরকার। তার পাশাপাশি যদি সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংক ইন্টারেস্ট যদি একটু সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যায় তাহলে একটু উপকৃত হবে।’

চা শুধু অর্থনীতির একটি খাত নয় বরং কয়েক লাখ মানুষের জীবিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

এসএস