অর্থনীতি , শিল্প-কারখানা
বিশেষ প্রতিবেদন
0

চাহিদা থাকলেও এন্টিক গহনায় লাভবান হতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা

স্বর্ণের দাম বাড়ায় বগুড়ায় চাহিদা বেড়েছে এন্টিকের গহনার। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন এন্টিক গহনার কারিগররা। তবে কাঁচামালেরর সাথে বিক্রয় মূল্য সমন্বয় না থাকায় লাভবান হতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। তাই এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি তাদের।

অসুস্থ স্বামী আর তিন সন্তান নিয়ে বগুড়া সদরের ধরমপুর এলাকায় বসবাস আমেনা বেগমের। শয্যাশায়ী স্বামী ও সন্তানের দেখাশোনার পর যে সময় থাকে সে সময়ে যা উপার্জন করেন তাই দিয়ে চলে সংসার। আমেনা বেগম নিজের বাড়িতেই তৈরি করেন এন্টিকের গহনা। সপ্তাহে আয় হয় প্রায় সাত হাজার টাকা।

শুধু আমেনা বেগমেই নয় এমন হাজারও এন্টিকের কারিগর রয়েছে বারোপুর,ধরমপুরসহ আশপাশের এলাকায়। সেখানে তৈরি হচ্ছে সীতাহার,শাড়িমালা,কান্তামালা,পায়েল,নুপুর, টিক্লিসহ প্রায় ১৫০ ধরনের গহনা। এসব গহনা তৈরি করেই চলে কারও সংসার, কারও হাত খরচ কারও আবার পড়ালেখার খরচ।

একজন শিক্ষার্থী গহনা কারিগর বলেন, 'কাজ করে মোটামুটি ভালোই চলে। আমি এই কাজ করে লেখাপড়া করছি।'

এন্টিক গহনার কাজ করছেন আমেনা বেগম। ছবি: এখন টিভি

অন্য একজন গহনা বিক্রেতা বলেন, 'সংসারের সব কাজ শেষ করে তারপর এই কাজ করতে বসি। কখনও পাঁচটা হয় আবার কখনও সাতটা হয়। সেটাই বিক্রি করে সংসার চালাই।'

বগুড়ায় আশির দশকে শুরু হয় এন্টিকের গহনা তৈরির কাজ। সোনার দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে চাহিদা বাড়তে থাকে এন্টিকের গহনার। ২০০০ সালের পরে এই এলাকায় ঘটে যায় এন্টিকের গহনা বিপ্লব। বর্তমানে স্বর্ণের রেকর্ড পরিমাণ দামে চাহিদা আরও বেড়েছে এন্টিকের গহনার। তবে কাঁচা মালের বাড়তি দামের সাথে তৈরি পণ্যের বিক্রয় মূল্য সমন্বয় করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন মহাজনরা। বাড়ছে না কারিগরদের মজুরিও।

একজন কারিগর বলেন, 'আগে আমরা কাজ করতাম দিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার। কিন্তু এখন দেখা যায় সারাদিন কাজ করে ৪০০ টাকারও কাজ করতে পারি না।'

অন্য একজন কারিগর বলেন, 'মজুরি যেটা পাই সেটা দিয়ে সারা সপ্তাহ চলে না আমাদের।'

একজন এন্টিকের গহনার দোকানি বলেন, 'যে আইটেমগুলো একসময় আমরা নিজেরাই তৈরি করতাম কিন্তু স্থানীয় অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থার কারণে ব্যবসায় খরা চল এখন।'

ব্যবসায়ীরা বলছেন ব্যবসা বাড়াতে সরকারি বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পান না তারা। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মুলধন বাড়াতে ঋণ দিতে চাইলেও কঠিন শর্তের বেড়াজালে তা গ্রহণ করতে পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এদিকে ভিন্ন কথা বলছেন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের কর্মকর্তা।

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক একে এম মাহফুজুর রহমান বলেন, 'আমরা এর আগে বেশকিছু ঋণ দিয়ে আমাদের উদ্যোক্তাদের সাহায্য করেছি। কিন্তু তারা ঠিকমতো টাকা দেয়নি। তারা ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। তাদের যে অ্যাসোসিয়েশন আছে তাদের বলেছি যে ভালো উদ্যোক্তাদের একটা তালিকা দেয়ার জন্য সে তালিকা অনুযায়ী, আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী যাচাইবাছাই করে আমরা ব্যবস্থা নিবো।'

তামা,পিতল,দস্তাসহ বিভিন্ন ধাতুর সংমিশ্রণে তৈরি এই গহনাগুলো রাজধানীর চকবাজার হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশ-বিদেশে।

এসএস