বাবাকে হত্যার পর ছেলেকে বাঁচাতে অপহরণের নাটক সাজায় মা-ছেলে মিলে।
এলাকাবাসী জানান, চাকু আর বটি হাতে, গায়ে রক্ত নিয়ে বের হয়ে গেছে। তারপর সন্ধ্যায় স্বীকার করলো যে ছেলেটা তার বাবাকে হত্যা করেছে৷
শুধু একটি ঘটনা নয় প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে এমন পারিবারিক হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘ তিন বছর প্রেমের পর বিয়ে করেন মোটর মেকানিক জুনায়েদ। বিয়ের পর জানতে পারেন তার স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা। তখন স্ত্রীকে হত্যার পর নিজে করেন আত্মহত্যা। জুয়ার টাকা চাইলে দিতে অস্বীকৃতি জানালে বাবা-মাকে নৃশংসভাবে হত্যার পরে ঘরের মেঝেতেই মাটি চাপা দেয় ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, বউকে হত্যা করার পর ছেলে নিজেও আত্মহত্যা করে। সকালে দোকানে না আসায় বাসায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য।
ভালোবাসা, বিশ্বাস আর রক্তের সম্পর্কের বন্ধনে ফাটল ধরাচ্ছে হিংসা, অবিশ্বাস আর প্রতিশোধ। গত ৯ মাসে দেশে ৪৫৬টি পারিবারিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে স্বামীর হাতেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৬৯ জন নারী।
আরও পড়ুন:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, জমি নিয়ে বিরোধ এবং জুয়া আর মাদকাসক্তির টাকার লেনদেন এখন পারিবারিক সহিংসতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র রাজধানীতে প্রতিমাসে ২০ থেকে ২২ জন পারিবারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘গড়ে ২০ থেকে ২২টির মতো খুনের ঘটনা সংগঠিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ অবশ্যই পারিবারিক সম্পর্ক বা দাম্পত্য কলহের জের ধরে ঘটে থাকে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারেই বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা। এছাড়া মূল্যবোধের অবক্ষয়, আর বিচারের দীর্ঘসূত্রতাকে বড় কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মানবাধিকার কর্মী মাহমুদা হৃদী বলেন, ‘বর্তমানে পারিবারিক সমস্যাটা বৃদ্ধির মূল কারণ হলো পুরুষতান্ত্রিক যে প্রভাব আছে সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা আরেকটা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার একটা খারাপ ব্যবহার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘যে ধরনের নীতি নৈতিকতার বা যে ধরনের আস্থার, সম্মানের, শ্রদ্ধার জায়গা থাকা দরকার এ জায়গাগুলোতে যথেষ্ট ঘাটতি আছে।’
সামাজিক আন্দোলন, পারিবারিক শিক্ষা, আর ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করার পরামর্শ ধর্মীয় নেতার।
ইসলামিক স্কলার মাওলানা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পারিবারিক শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষার মোরাল এডুকেশনকে যদি আমরা এড্রসকে করতে পারি, যখন দ্বীনের এ শিক্ষা মানুষের মধ্যে চলে আসবে তখন এ শান্তি স্থিতিশীলতা নিরাপত্তার বাঁধনে পরিণত হয়ে যাবে।’
অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘পরিবারকে আরও যুতসই ও সময়োপযোগী করার জন্য পরিবার ভিত্তিক সেবা ব্যবস্থা সরকারের থেকে চালু করা। এ তিনটি ব্যবস্থা যদি চালু করা যায় তখন এ সহিংসতার প্রসঙ্গগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’
এছাড়া পরিবারে সঠিক মূল্যায়ন আর বোঝাপড়ার মাধ্যমেও সহিংসতা কমানো যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।





