অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান
প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদিপ্রাণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বৃক্ষবন্দনা'র সেই আদিম প্রাণের বিচরণ সর্বত্র। তবে ক্রমবর্ধমান নগরীর কংক্রিটের ছায়ারা যেখানে ধীরে ধীরে গিলে খায় সবুজ, সেখানে পাতার আচ্ছাদন পরম আরাধ্য। যখন খোঁজ মেলে তাতে শরীর ডুবাতে কে না চায়! তাইতো ভরদুপুরে প্রশান্তি ছুঁতে হাজির নাবাতা-স্বপ্নিল।
ভরদুপুরে সবুজের প্রশান্তি ছুঁতে নাবাতা-স্বপ্নিল
পথিক থেকে দিনমজুর। শুষ্ক নগরে শান্তির খোঁজে দ্বারস্থ হন বৃক্ষতলে। এই যেমন মাহবুল মিয়া। দুপুরের আহার শেষে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিলেন গাছের ছায়ায়। প্রশান্তির খোঁজে রিকশাচালক দরুল মিয়াও। তবে রাজধানীতে দিনে দিনে বৃক্ষনিধনে এমন জায়গা কমছে বলে জানালেন তারা।
সবুজের ছাড়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন ক্লান্ত মাহবুল মিয়া
গত কয়েক বছরে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাটা পড়েছে কয়েক হাজার গাছ। এমনকি চলতি বছর ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে সংস্কারের নামে কাটা হয়েছে আরও প্রায় ৩ হাজার গাছ।
পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘যেখানে আগে থেকে গাছ আছে সেটা তো নির্মূল করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা বিশ্বের অনেক দেশে দেখেছি একটা গাছ রক্ষা করতে গিয়ে একটি ভবন এমনকি রাস্তাও বেঁকে যায়। আসলে এটাই গাছের গুরুত্বের পর্যায়। নগর পরিকল্পনায় যে বৃক্ষ রক্ষা করতে হবে এই বেসিক জায়গাটায় আমরা ভুল করে আসছি এবং ভয়ংকরভাবে কংক্রিট নির্ভর পরিকল্পনা সাজিয়েছি আমরা, সেখান থেকেও আমাদের সংস্কার দরকার ।’
গবেষণা বলছে, গত ২৮ বছরে ঢাকায় সবুজ কমে নেমেছে ৭ শতাংশে। অথচ একটি আদর্শ নগরীতে সবুজ থাকতে হয় ২০ শতাংশ। আর এতে, নগরীতে বেড়ে চলছে গড় তাপমাত্রা, যার জন্য সিটি করপোরেশনসহ নগর উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিকল্পহীনতাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২৮ বছরে ঢাকায় সবুজ কমে নেমেছে ৭ শতাংশে
উদ্ভিদবিষয়ক গবেষক ও লেখক মোকারম হোসেন বলেন, ‘এ শহরে পরিকল্পনা করে কিছু হয়নি, এমনকি এখন যে শহরটা বাড়াচ্ছে বিভিন্ন দিক থেকে সেটারও কোনো পরিকল্পনা হয়নি। পরিকল্পনা না থাকার কারণে আমাদের যে দালান-কোঠা অবকাঠামো, সড়ক এবং অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে সব কিছুর মধ্যে এক ধরনের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুলো এখনও সুযোগ আছে সবুজায়ন বাড়িয়ে শহরকে রক্ষা করার। তাই দেরি না করার তাগিদ তাদের।