আরপিও ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে ‘একই সুর’ এনসিপির, ইসিকে চিঠি

এনসিপির লোগো ও ইলেকশন ভবন
এনসিপির লোগো ও ইলেকশন ভবন | ছবি: এখন টিভি
0

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ (রোববার, ২ নভেম্বর) দলটির পক্ষ থেকে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ চিঠি পাঠান। এর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও ‘একই সুরে’ ইসিকে বার্তা দিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘যদি ‘‘কোনো নিবন্ধিত দলের প্রার্থী জোটভুক্ত অন্য দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন’’ এমন আদেশ জারি করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সর্বশেষ সংশোধনী বাতিল করা হয়, তবে তা হবে একটি দলের সঙ্গে সরকারের গোপন সমঝোতা। এছাড়াও এর মাধ্যমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ন্যক্কারজনকভাবে ভঙ্গ হবে।’

ইসিতে এনসিপির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন ও উপদেষ্টা পরিষদের সাম্প্রতিক বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যে প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে তাদের নিজস্ব নাম ও প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, আইনের সংশোধনী সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের ঠিক আগ মুহূর্তে সে সিদ্ধান্ত এখন পুনর্বিবেচনার আওতায় আনা হয়েছে। দীর্ঘদিনের একটি বিকৃতি দূর করার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল।

দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম চিঠিতে বলেন, ‘২০০৮ সালে আরপিও-তে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ সংশোধনী আনা হয় যাতে সংশোধিত ২০ অনুচ্ছেদের বিধানের সুযোগ নিয়ে বহু ছোট বা নামমাত্র দল বড় দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এতে ভোটাররা বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং কৃত্রিম জোট রাজনীতির মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের প্রক্রিয়া বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সর্বোপরি সাধারণ জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আওতায় আনার মূল উদ্দেশ্যই হলো দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। কিন্তু যখন কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অন্য নিবন্ধিত দলের প্রতীকে নির্বাচন করে, তখন তারা এ দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যায়। এতে নিবন্ধন ব্যবস্থার আইনি গুরুত্ব থাকেনা এবং নির্বাচনী স্বচ্ছতা বিপন্ন হয়। তদুপরি, বড় দলের প্রতীকে ছোট দলগুলোকে নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়ার ফলে এক ধরনের কাঠামোগত বৈষম্য তৈরি হয়েছে, যেখানে বড় দলগুলো নিজেদের প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ছোট দলগুলোকে ব্যবহার করছে। এই “প্রক্সি রাজনীতি” গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা, ন্যায্য প্রতিযোগিতা ও প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রের পরিপন্থি।

চিঠিতে বলা হয়, আমরা মনে করি, প্রতিটি নিবন্ধিত দলকে তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে তা একটি ঐতিহাসিক ও নীতিগতভাবে সঠিক পদক্ষেপ। পরবর্তীতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও'র সংশোধনীর মাধ্যমে উক্ত বিধান অনুমোদিত হয়েছে এবং শুধুমাত্র গেজেট প্রকাশ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে এখন সরকার বা নির্বাচন কমিশন যদি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র রাজনৈতিক চাপে পাশ হওয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার মাধ্যমে সরকার তার অবস্থান পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়, সেক্ষেত্রে শুধু কমিশনের স্বাধীনতার ওপরই আঘাত নয়, বরং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সরকারের কার্যক্রমের ওপরও আঘাত।

চিঠিতে দুটি অনুরোধের বিষয়ে জানানো হয়। এগুলো হলো-

১. কমিশনের গৃহীত এবং উপদেষ্টা পরিষদে পাস হওয়া আরপিও’র অনুচ্ছেদ ২০ এর সংশোধনী অনুযায়ী গেজেট প্রকাশ করা হোক, যাতে প্রতিটি নিবন্ধিত দল তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে বাধ্য থাকে।

২. নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত যেন বিএনপির অন্যায় চাপের প্রভাবে পরিবর্তিত না হয়, সে বিষয়ে লিখিত নিশ্চয়তা প্রদান করা হোক।

এই সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের ভবিষ্যতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কমিশন এই অবস্থানে দৃঢ় থাকলে তা দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আর নির্বাচন কমিশন এবং সরকার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির চাপে এ অবস্থান থেকে সরে আসলে তাতে কমিশনের নিরপেক্ষতা, সক্ষমতা এবং সামগ্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে জনগণের সন্দেহ পাকাপোক্ত হবে।

এএইচ