চৈতালি ধানের স্নিগ্ধ সবুজে ভরপুর বরেন্দ্র এলাকার মাঠঘাট। তবে মাথার ওপরে সূর্যের তাপে গেলো কয়েক সপ্তাহজুড়ে হেক্টরের পর হেক্টর ফসলি জমি পুড়ছে।
চাষীরা বলছেন, এ সময় যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন তার এক ফোঁটাও নেই। এতোবেশি গরম পড়ছে, কাজ করা যাচ্ছে না। আর বৃষ্টিও হচ্ছে না, এতে করে আমাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
তবে পানি নিয়ে সমস্যায় পড়েনি বরেন্দ্রের উঁচু গ্রাম ডাহাল-লাঙ্গির এলাকার কৃষক ইস্টেফান কিসকু। সপ্তাহজুড়ে ৩৯ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তার খেতে জমে থাকা পানিতে ধানের গোড়ায় পচন ধরছে।
ইস্টিফান কিসকু বলেন, ‘গরমে তো পানি দিতেই হচ্ছে। পানি দেওয়ার পরও ধানের গোড়ায় পচন ধরছে। আবার পোকার আক্রমণও দেখছি।’
এই গরমে বরেন্দ্রজুড়ে ৭০ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে ধানের সেচ আর রোগবালাই নিয়ে বিপাকে আছেন সাড়ে তিন লাখ কৃষক। এবার জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৫ লাখ ২৬ হাজার ৫শ’ বিঘায় চৈতালি-বোরো ধানের আবাদ করেছেন চাষীরা। এতে অধিকাংশ জমিতে বঙ্গবন্ধু-১০০, ব্রি-৮৫, ৮৬, বিনা-১৪, ১৭, ২৪, ২৫ ও জিরা জাতের ধানের চাষ হয়েছে। তবে এবার বৃষ্টি না হওয়ায় ধান চাষে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর শতভাগ নির্ভর করতে হয়েছে।
সেচের এই পানি বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে পারছে না বরেন্দ্রর শুষ্ক মাটি। যাতে তিন মাসে ১২টি সেচের পরিবর্তে দ্বিগুণ হয়েছে পরিমাণ। এদিকে গেল সপ্তাহজুড়ে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় পচন আর পোকার আক্রমণ ঠেকাতে প্রতি বিঘা জমিতে কিটনাশক প্রয়োগে অতিরিক্ত ৭শ’ টাকা খরচ হচ্ছে। এতে বিঘাপ্রতি ধান উৎপাদনে প্রায় ২ হাজার ৪০০ টাকা খরচ বেড়েছে।
এছাড়া শুষ্ক বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রচণ্ড তাপদাহে ফসলের পরিচর্যায় শ্রমিক ব্যয় বাড়লেও কর্মঘণ্টা কমেছে। এতে যত্নের অভাবে পড়েছে ফসল। আর আশানুরুপ উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে সালাম বলেন, ‘অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ থাকলেও ফসল উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না। আমাদের ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছি।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘উৎপাদনের অতিরিক্ত খরচের বিষয় বিবেচনা করে ধানের দাম নির্ধারণ করতে হবে।’