সূর্যের আলো আর তাপ নিয়ন্ত্রণ শেডের নিচে ফুটে আছে লাল, সাদা, হলুদ, গোলাপি, কমলা রঙের বিদেশি অতিথি। কেউ ছুঁয়ে দেখছেন, কেউবা তার সঙ্গে নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করছেন। রাজসিক সৌন্দর্যের ফুল টিউলিপের মুগ্ধতা নিতে তেঁতুলিয়ার সীমান্তবর্তী দর্জিপাড়া গ্রামে আসছেন দর্শনার্থীরা।
একজন দর্শনার্থী বলেন, 'আমাদের দেশের আবহাওয়াতে এই ফুল হবে আগে কখনো ভাবিনি। যা দেখে অনেক ভালো লাগলো।'
আরেকজন বলেন, 'লাল কালারের ফুলগুলো বেশি সুন্দর। মন জুড়িয়ে যায়।'
২০২২ সাল থেকে এই গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষ শুরু করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। যাদের আর্থিকভাবে সহায়তা দিয়েছে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। প্রথম বছর টিউলিপের ৪০ হাজার বাল্ব রোপণ করা হয়। পরের বছর বিভিন্ন রঙের আরও ১ লাখ। এবার রোপণ করা হয়েছে ২৬ হাজার বাল্ব।
প্রতিটি গাছে ছড়াচ্ছে ফুলের মুগ্ধতা। আর তাদের পরিচর্যায় দিনরাত কাজ করছেন স্থানীয় ১৬ জন কৃষক। কাছ থেকে ফুলের ভালোবাসা নিতে গুণতে হচ্ছে জনপ্রতি ৫০ টাকা।
দর্শনার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'পিকেএসএফ আর্থিকভাবে সহায়তা করছে। আমার মনে হয় এখানে প্রবেশ ফি না নেওয়ায় ভালো।'
টিউলিপের পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা চাষিরা জানান, প্রতিটি বাল্ব নেদারল্যান্ডস থেকে আনতে খরচ পড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। পরিচর্যাসহ সব মিলিয়ে প্রতিটি ফুল উৎপাদনে খরচ ১শ' টাকার বেশি। তবে সেই অনুযায়ী মিলছে না দাম। সেজন্য প্রতি বছরই বড় অঙ্কের লোকসানে প্রকল্পটি।
টিউলিপ চাষিরা বলেন, 'চাষের খরচ ব্যয়বহুল কিন্তু ঢাকার মার্কেটে আমরা তেমন দাম পাচ্ছি না।'
চাষিদের আরেকজন বলেন, 'টিউলিপের বীজ যদি আমরা করতে পারি, তাহলে লাভের মুখ দেখতে পারবো। তাছাড়া বাল্বের দাম যদি কম হয়, তাহলে বেশি করে চাষ করলে লাভবান হওয়া সম্ভব।'
তেঁতুলিয়ার আবহাওয়া ও জলবায়ু টিউলিপ চাষের জন্য উপযোগী হলেও এর বাণিজ্যিক চাষ নিয়ে রয়েছে ঝুঁকি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয়ভাবে বীজ উৎপাদনের চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া শাখার ইএসডিও ব্যবস্থাপক অলিয়ার রহমান বলেন, 'বাল্বগুলোয় গাছ হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পরে গাছ আর বৃদ্ধি পায় না ফুলও ফুটে না। তবে দেশিয় পদ্ধতিতে ফুল চাষের চেষ্টা চলছে।'
দেশেই এই ফুলের বীজ তৈরি করা গেলে উৎপাদন খরচ কমে আসবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা। এজন্য কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহযোগিতা চাইলেন তিনি।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌস বলেন, 'এটার বীজ যেহেতু সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে শুনেছি সংরক্ষণ করা গেলও ফুল ফুটছে না। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে এদিকে নজর দিতে বলবো।'
কেবল শোভাবর্ধন নয়, টিউলিপের বাণিজ্যিক চাষের পথ খুঁজে পেলে এটি উত্তরের কৃষি অর্থনীতিতে যুক্ত করবে নতুন মাত্রা এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।