শনিবার (১২ জানুয়ারি) শ্রমিকদের অতর্কিত হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় শতভাগ রপ্তানিমুখী কারখানা জেএমএস। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাচ, চেয়ার, টেবিল ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি। ঘণ্টাব্যাপী চারপাশ থেকে কারখানাটিতে ভাঙচুর চালায় মেরিকো নামে আরেকটি কারখানার শত শত শ্রমিক।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, হঠাৎ দুই পাশ থেকে দৌড়ে এসে কারখানাটি ঘিরে আক্রমণ শুরু হয়। শ্রমিকদের দাবি, রপ্তানিমুখী দেশের বৃহৎ এ শিল্পাঞ্চলকে হঠাৎ অস্থিতিশীল করতেই পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে দেখা যায়, সড়কে পড়ে আছে কয়েক হাজার ইটের টুকরো, যা আগে থেকে জমা করা। বালতি ভরে এসব ইটের টুকরো নিয়ে আসা হয়।
শ্রমিকদের একটি পক্ষের ফেসবুক চ্যাটিংয়ে উঠে আসে শনিবারে হামলা চালানোর কথোপকথন। শ্রমিকদের অভিযোগ, আগের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে শনিবার হঠাৎ হামলা করা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। শুধু এ দুই কারখানায় নয়, বেতন-ভাতা নিয়ে ইপিজেডে আরো কয়েকটি কারখানায় আন্দোলন করার চেষ্টা করছে শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘৯ দফা দাবি নিয়ে প্রত্যেকটা ফ্যাক্টরিতে কম বেশি আন্দোলন চলছে।’
আরেকজন বলেন, ‘শুক্রবারে প্ল্যানিং করে শনিবারে এই হামলা করে।’
শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ ঘটনা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারতো।
এসময় তারা জানালায় টেবিল ঠেকিয়ে ও ফায়ার পাইপে পানি ছিটিয়ে বাইরে থাকা আসা আগুনের শিখা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। তা না হলে আগুন ধরে যেতো পুরো কারখানায়। যেটি নাশকতার চেষ্টা বলছেন তারা।
শ্রমিকদের আরো একজন বলেন, ‘পরিকল্পনা করে আমাদের ফ্যাক্টরির চারদিক থেকে বাহিরের লোকজন দিয়ে এই হামলা চালানো হয়।’
শনিবার যে দুটি কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে হয়, সেই কারখানার একটি বাংলাদেশি মালিকানাধীন। যেটি ইউরোপ, আমেরিকায় রপ্তানির জন্য পোশাক তৈরি করছিলো। অন্যটি কোরিয়ান মালিকানাধীন। দুটি কারখানাই কয়েকদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রপ্তানি অঞ্চলে এমন ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।
জেএমএসের ব্যবস্থাপক এ এইচ মামুন বলেন, ‘বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়েও আজকে তিন চারটা ফ্যাক্টরি নামছে। সেক্ষেত্রে দেশের একটা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার ব্যাপার তো আছে।’
তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে এতো বড় সংঘর্ষ সন্দেহের চোখে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। সিইপিজেডে শ্রমিক অসন্তোষে কারও ইন্ধন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় সেনাবাহিনী।
চট্টগ্রামের হালিশহর টাস্কফোর্স ৩ এর মেজর আরেফিন কবির বলেন, ‘দুই গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষকে ডাকা হয়েছে আমাদের ইপিজেড অফিসে। শ্রমিক অসন্তোষে কারও ইন্ধন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।’
সিইপিজেডের জিএম আবদুস সোবাহান বলেন, ‘সমস্ত তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে এই হামলা। মালিক পক্ষ নিয়ে বসবো। সরকারি সংস্থা এ ব্যাপারে দেখছে।’
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম এ ইপিজেডে ৫০১টি শিল্প প্লটে দেশি-বিদেশি কারখানায় কাজ করে প্রায় ২ লাখ শ্রমিক। যেখানে বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলার।