বাবা ছিলেন পুলিশ সদস্য, পেশায় শিক্ষক। জরুরি প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের আবেদন করেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর মো. আব্দুর রউফ। কিন্তু এক দফা পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ হওয়ার পর আবারও নতুন করে যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে তার আবেদন। কারণ,পরিবর্তন করেছেন ভোটার এলাকা। এখন এসব কাগজ নিয়েই পাসপোর্ট অফিসে ঘুরছেন তিনি।
একই ভোগান্তির শিকার চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মো. জাকির হোসেন। ২০১৩ সালে একটি মামলায় নাম আসায় ৪ বছর আগে আবেদন করেও এখনো পাননি পাসপোর্ট। যদিও ২০২৪ সালের শেষের দিকে আদালত তাকে মামলা থেকে খালাস দিয়েছে, তবে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জটিলতায় আটকে আছে তার পাসপোর্ট।
এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন অনেকেই। অনেকে পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন, দিতে হচ্ছে অনৈতিক অর্থ, তাতে যেমন বাড়ছে ব্যয়, তেমনি সময়ও নষ্ট হচ্ছে। তাই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ নাগরিক।
এখন এই পুলিশ ভেরিফিকেশন বন্ধের চিন্তার বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নাগরিকরা।
পাসপোর্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তি ও সেবা প্রদান ডিজিটাল হওয়ায় পুলিশ ভেরিফিকেশন উপযোগিতা হারিয়েছে। নাগরিকদের সমস্ত তথ্য এখন একটি ডাটাবেজেই পাওয়া যায়। তাই কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে স্বল্প সময়েই সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস পরিচলাক সাঈদুল ইসলাম বলেন, ‘ এটা আমাদের সফটওয়্যার সিস্টেমে নেই এতে আগে ইন্ট্রিগেট করতে হবে সেক্ষেত্রে সফটওয়্যারে একটা কারেকশন করতে হবে। তখন আমরা পাসপোর্ট দিতে পারব, কারেকশন বিষয়টায় কিছুটা সময় তো লাগবেই। তত দিন হয়ত সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে।’
তবে চট্টগ্রামে প্রায়ই পাসপোর্ট করতে এসে ধরা পরছেন রোহিঙ্গারা। বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্টে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশ। তাই সীমিত পরিসরে ভেরিফিকেশন চালু রাখার দাবি বিশিষ্টজনদের।
চট্টগ্রামের সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির বলেন, ‘এ তুলে দেয়ার কারণে এখন রোহিঙ্গাদের যতটুকু যাচাই বাছাই হয় সেটাও আর থাকবে না। কোন এজেন্সি করবে আমি জানি না। তাই এটা আমাদের জন্য শাঁখের করাত হয়েছে। অন্তত একটা অঞ্চলে রাখা দরকার।’
জানা যায়, ব্রিটিশ সরকারের আমলে বৃটিশবিরোধী আন্দোলন দমন ও সেই আন্দোলনে জড়িত কেউ যেন সরকারি চাকরি না পায় সেজন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন চালু করেছিল তারা। যার অপব্যবহার চলছে এখনও।