'ঐতিহ্য ধরে রাখতে আধুনিক সঙ্গীত চর্চায় আদি বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে'

সংস্কৃতি ও বিনোদন
দেশে এখন
0

একসময় দেশিয় বাদ্যযন্ত্রে মুখর থাকতো সঙ্গীতাঙ্গন। সেই যন্ত্রের চাহিদা পূরণে জাঁকজমক ছিল যন্ত্রশিল্পী ও কারিগরদের জীবন। তবে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের দাপটে টিকতে পারছেন না সাতক্ষীরার দেশি বাদ্যযন্ত্রের কারিগররা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঐতিহ্য ধরে রাখতে আধুনিক সঙ্গীত চর্চায় আদি বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

আধুনিক সঙ্গীতচর্চা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে ব্যবহার হতো দেশিয় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। কালের বিবর্তনে ডিজিটাল সংস্কৃতির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে হারিয়ে গেছে অতীতের অনেক বাদ্যযন্ত্র। সঙ্গীতেও লেগেছে পাশ্চাত্যের ছোঁয়া। তাই একসময় যাদের সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয়েছিল হারমোনিয়াম কিংবা তবলায়, তাদের উত্তরসূরিরা বেছে নিয়েছেন ইলেট্রনিক্স বাদ্যযন্ত্র। ফলে বাজার হারিয়েছে দেশিয় বাদ্যযন্ত্র।

জেলা শহরের শহীদ নাজমুল সরণির দেশিয় বাদ্যযন্ত্র ব্যবসায়ী অনিল চন্দ্র দাস। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এই ব্যবসা করছেন তিনি। তার দোকানে তৈরি করা হয় নানা ধরনের দেশিয় বাদ্যযন্ত্র। আগে যেখানে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ব্যবসা হতো, এখন সেখানে বিক্রি নেমেছে পাঁচ লাখে। তারপরও দুই ছেলেকে সাথে নিয়ে নিজের পেশা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন তিনি।

অনিল চন্দ্র দাস বলেন, 'আগে তো ৪০ থেকে ৫০ হাজার চাকা মাসে আয় হতো। এখন দাম বাড়ার কারণে কামকাজ দিনদিন কমে যাচ্ছে। আর এর সাথে আয়ও কমে যাচ্ছে।'

বাজার দখলে থাকা ইলেকট্রনিক্স গিটার, কিবোর্ড, প্যাডসহ আধুনিক সব বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে জেলার অন্য ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গুটিয়েছেন অনেক আগেই। আবার যারা এখনও টিকে আছেন তাদেরও নেই তেমন বেচা-বিক্রি। দোকানগুলোতে নতুন বাদ্যযন্ত্র তৈরির চেয়ে মেরামতের কাজই বেশি। ফলে টিকে থাকতে না পেরে বাদ্যযন্ত্র তৈরির দক্ষ কারিগররাও পেশা বদল করে ঝুঁকছেন ভিন্ন পেশায়।

একজন কারিগর বলেন, 'আগের মতো এখন আর হয় না। সিজন ছাড়া কাজ পাওয়াই যায় না এখন। আগের মতো এখন এর প্রতি আর মানুষের আগ্রহ নেই। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় কেই তৈরি করতে চাচ্ছে না। এত দাম হলে কেউ কিনতে চায় না। অনেকে এই কাজ ছেড়ে দিছে। কারণ এই ব্যবসা দিয়ে তাদের সংসার চালানো যাচ্ছে না।'

ঢাক-ঢোল, হারমোনিয়াম, তবলা, খোল, একতারা, খমক, দোতারাসহ দেশিয় সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামতের কাজ হয় এখানে। তবে বর্তমানে কীর্তন শিল্পীরাই দেশিয় বাদ্যযন্ত্রের বড় ক্রেতা। এছাড়াও বাসা-বাড়ি, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে মাঝে মাঝে বাদ্যযন্ত্রের অর্ডার আসে এসব দোকানগুলোতে। সঙ্গীত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশিয় বাদ্যযন্ত্রের প্রতি তরুণদের আগ্রহ কম। তারা ঝুঁকছে ইলেক্ট্রনিক বাদ্যযন্ত্রের দিকে। এজন্য নতুন করে এসব যন্ত্রের শিল্পী তিরী হচ্ছে না।

সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোশফিকুর রহমান মিল্টন বলেন, 'বাদ্যযন্ত্র যারা তৈরি করে ঠিক তেমনি তারাও কিন্তু পিছিয়ে পড়েছে যারা ক্রেতা কিংবা উৎসাহিত হয়ে অন্যরা শিল্পী তৈরি হয়ে যে তাদের কাছ থেকে কিনবে সে চাহিদা কমে গেছে। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখতে আধুনিক সঙ্গীত চর্চায় আদি বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে।'

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বলছে, ঐতিহ্য রক্ষায় বাদ্যযন্ত্র কারিগরদের আধুনিক যন্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণ ও ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

সাতক্ষীরা বিসিকের উপব্যবস্থাপক গৌরব দাস বলেন, 'আমরা এই ধরনের শিল্পগুলোকে দেখভাল করি। এবং তাদের যদি আর্থিক সহযোগিতা লাগে তাহলে তারা যদি আমাদের কাছে আবেদন করে তাহলে অবশ্যই আমরা তাদরে আর্থিক সহযোগিতা করবো। আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যে ঋণ আছে সেখান থেকে। এছাড়াও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার মাধ্যমেও তাদের কর্মক্ষেত্রের মান উন্নয়নে আমাদের বিসিক তৎপর আছে।'

এক যুগ আগেও সাতক্ষীরা জেলা শহরে ১৫টির বেশি দেশিয় বাদ্যযন্ত্রের দোকান ছিল। তবে বর্তমানে টিকে আছে মাত্র তিনটি দোকান।

এসএস