সংস্কৃতি ও বিনোদন
দেশে এখন
0

নাটক মঞ্চায়নে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

গত শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হচ্ছিলো নাটক ‘নিত্যপুরাণ’। বিক্ষোভের মুখে মাঝপথে নাটক প্রদর্শনী বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন আয়োজকরা। জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘দেশ নাটক’ প্রযোজিত নাটক ‘নিত্যপুরাণ’ মঞ্চায়নের সময় ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত এ পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

আজ (সোমবার, ৪ নভেম্বর) প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‌‘গত ২ নভেম্বর, শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘দেশ নাটক’ প্রযোজিত নাটক ‘নিত্যপুরাণ’ মঞ্চায়নের সময় এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভকারীদের নির্বৃত্ত করার লক্ষ্যে ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিত, সে প্রক্রিয়ায় না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য শিল্পকলা একাডেমি একাধিকবার উদ্যোগ নেয়।

কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ক্ষান্ত হয়নি। বরং তাদের সংখ্যা বেড়ে গেলে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার উপক্রম হয়। তখন অভিনয়শিল্পী ও দর্শকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ‘দেশ’ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে দর্শকের নিকট দুঃখপ্রকাশ করে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কিন্তু গত ৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে দেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় “শিল্পকলায় নাটকের প্রদর্শনী বন্ধের ঘটনা সমর্থন করে না সরকার” শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের মূল বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে এটি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি বিক্ষুব্ধকারীদের নাটক বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাকে অর্থাৎ শিল্পচর্চার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সরকার সমর্থন করে না মর্মে বুঝিয়েছেন; তিনি মনে করেন মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

তাছাড়া বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বাবস্থায় জনগণের, শিল্পচর্চার ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্বাস করে। এজন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি চায় না শিল্পকলার কণ্ঠ কেউ রোধ করুক। কেননা, বাংলাদেশের হাজার বছরের নাটকের ইতিহাস আছে। নাটকের মাধ্যমেই সমাজের ত্রুটি বিচ্যুতি ও বিকল্প ধারণা তুলে ধরা সম্ভব। তাই যারা নাটক করতে চায় তাদের নাটক করতে দিতে হবে। নাটক দেখেই দর্শক বিবেচনা করবে তাদের নাটক তারা গ্রহণ করবে কি না। মতাদর্শ ও শিল্পকলার হাজার মালভূমির এই বাংলাদেশে সকল দলের নাটক করার বিষয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সার্বিক সহযোগিতা রয়েছে। শিল্পকলা একাডেমি মনে করে, জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তির কারণে নাটকের দল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে প্রচেষ্টা সাংস্কৃতিক সংগঠন বা নাটকের দলের থাকা উচিত। কোনো দলের ভেতরে বিতর্কিত কেউ যদি থাকে, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অস্বীকার করে এবং স্বৈরাচারীর দোসর হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের কার্যক্রমকে এখনো সমর্থন করে তাহলে দলের পক্ষ থেকেই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এসব গণহত্যার দোসর বা সমর্থনকারীদের তিরস্কার করে, নিন্দা জানায়। সুস্থ, উৎসবমুখর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনবান্ধব শিল্পচর্চায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পাশে থেকে দেশের শিল্প সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখতে দেশের সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবীসহ দেশের জনসাধারণ এগিয়ে আসবে এটাই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রত্যাশা।’

এএইচ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর