শিক্ষা
দেশে এখন
0

সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশ, বেড়েছে জিপিএ-৫

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। পাসের হার ৭৭.৭৮। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। এবার সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ কারণে জিপিএ-৫ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। এবার সব বোর্ডগুলোর মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড সবচেয়ে এগিয়ে। এদিকে এইচএসসির ফল প্রকাশের পর উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হলো। এই পরীক্ষার্থীরাই গণঅভুত্থানে রাজপথে থেকেছে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার কারিগর তারা। শেখ হাসিনা সরকার হটাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও।

সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আনন্দ মেতেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হচ্ছে। অভিভাবক আনন্দে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন। শতভাগ পাশ করার পাশাপাশি এ বছর জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে আদমজী ক্যানটনমেন্ট কলেজ।

আদমজী ক্যানটনমেন্ট কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, গোল্ডেন পেয়েছি। অনেক ভালো লাগছে। ভালো ফলাফলের পেছনে মূল কারিগর হচ্ছে আমাদের বাবা-মা আর আমাদের শিক্ষকরা।’

একজন অভিভাবক বলেন, ‘এই রেজাল্টের পেছনে আমাদের পরিশ্রম আছে। তাব বাচ্চাদেরটাই বেশি। বাচ্চা জীবনে যে সাফল্যই অর্জন করুক, ডাক্তার হোক আর ইঞ্জিনিয়ার হোক সেটা বড় বিষয় না, ভালো মানুষ হোক এটাই চাই।’

আদমজী ক্যানটনমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবিএম নওরোজ এহসান বলেন, ‘তুমি কোথায় যেতে চাও সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে এখন প্রস্তুতি নাও এবং পরবর্তীতে যদি ভালো জায়গায় চান্স পাও সেটাই হবে সত্যিকারের সাফল্য।’

পরীক্ষা শুরু পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কয়েক দফায় পেছানো হয় পরীক্ষা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেয় স্থগিত থাকা বিষয়গুলোর পরীক্ষা নিতে। কিন্তু পরীক্ষা বাতিলের দাবির মুখে স্থগিত থাকা পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয়। সিদ্ধান্ত আসে অনুষ্ঠিত হওয়া বিষয়ের পরীক্ষাগুলোর খাতা মূল্যায়ন করা হবে, আর যে-সব বিষয় বাতিল হয়েছে তা সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল দেয়া হবে।

এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭.৭৮ শতাংশ। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় এক শতাংশ কম। ৯৩.৪০ শতাংশ পাসের হার সব চেয়ে এগিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং ৬৩.২২ শতাংশ পাসের হার নিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে ময়মনসিংহ বোর্ড। এছাড়া ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৯.২১ শতাংশ, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ৮১.২৪ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৭১.১৫ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৬৪.২৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭০.৩২ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৮১.৮৫ শতাংশ সিলেট বোর্ডে ৮৫.৩৯ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৭.৫৬ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৮৮.০৯ শতাংশ।

জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। যা গতবারের চেয়ে ৫৩ হাজার ৩১৬ জন বেশি। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড বলছে, বিষয় ম্যাপিংয়ের প্রভাবে বেড়েছে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা। তবে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ গ্রহণে তেমন সংকট হবে না বলেও জানায় আন্তঃশিক্ষাবোর্ড।

বাংলাদেশ আন্ত: শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, 'এখানে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে তাদের রেজাল্ট হয়েছে। এর জন্য জিপিএ-৫ বেড়েছে। তবে রেজাল্টের মধ্যে যখন বাচ্চা যখন অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট বা সার্টিফিকেট পাবে তখন এই রেজাল্ট ম্যাপিং জাতীয় কোনো কথা থাকবে না। অর্থাৎ বিদেশে যে তার পড়ালেখা করার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে, এমন কোনো সুযোগ নেই।'

তবে বিষয় ম্যাপিংয়ে ফল প্রকাশের ফলে শিখন ঘাটতিসহ উচ্চ শিক্ষায় নানা চ্যালেঞ্জের শঙ্কা শিক্ষাবিদদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম বলেন, ‘যে সাবজেক্টগুলো তারা পরীক্ষা দেয়নি, ওই যে তিনদিন বা সাতদিন পড়ার সুযোগ পেত তাতে তাদের ভিত্তি অনেক শক্ত হতো। একই সাথে তারা হয়ত অনেকে সেটা কোচিংয়ে কন্টিনিউ করছে।’

এ বছর সকল শিক্ষাবোর্ডে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী ৪.৩৪ শতাংশ বেশি পাস করেছে, একই সাথে ১৫ হাজার ৯৫৫ জন ছাত্রী বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছে।

এবার শতভাগ পাসের হার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৮টি। অন্যদিকে পাসের হার শূন্য প্রতিষ্ঠান ৬৫ টি। শিক্ষাবোর্ড বলছে, পরবর্তীতে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের মানোন্নয়ন করতে না পারলে বাতিল করা হবে পাঠদানের অনুমতি।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর