দেশে এখন
0

‘বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটক ভ্রমণ বন্ধ রাখা হয়েছে’

বর্তমান পরিস্থিতি কারণে তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটক ভ্রমণ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বলেন, 'এভরিথিং হ্যাপেনস ডিউ টু প্রেজেন্স অফ নেসেসারি কনিডশনস। নেসেসারি কনডিশনস বলতেছে আপাতত বন্ধ রাখা দরকার। সেকারণে বন্ধ রাখা হয়েছে।'

আজ (বুধবার, ৯ অক্টোবর) দুপুরে রাঙামাটি শহরে ২০ সেপ্টেম্বর সংঘটিত পাহাড়ি-বাঙালি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ২০ দিন পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

এসময় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, এএসইউ পদাতিক ডেট কমান্ডার লে. কর্নেল মোহাম্মদ আল মামুন সুমন, পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে তিনি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যালয় পরিদর্শন করেন এবং আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার সাথে বৈঠক করেন।

সাংবাদিকদের দেয়া বক্তব্যে পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, 'আইন আছে, শৃঙ্খলা আছে, সুতরাং তারা যেভাবে দেখতেছেন। আমি তাদেরকে অ্যাপ্রিশিয়েট করবো আরেকটু তারা যেন জনগণের আস্থা অর্জন করার মত আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা রাখে।'

সহিংসতার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কোন পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, 'পরিকল্পনা আছে। দেখে গেলাম। দরখাস্ত দিতে বলেছিলাম। আর ডিসি সাহেবও আমাদেরকে দরখাস্ত পাঠিয়ে দিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দেবেন। আমরা যতটুকু পারি সাহায্য করবো।'

তিনি বলেন, 'এসপি সাহেবকে অলরেডি বলেছি। এইযে এখনও বললাম আগে যে মামলাটা নেয়া হয় নাই। মামলা যেন নেয়। সঠিক বিচার যেন হয় এবং কোনো হয়রানি যেন না হয়। এটা আমাদের পাহাড়ি বাঙালি যেই হোক; দোষী দোষীই যেন হয়। এটা হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য।'

পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে পার্বত্য তিন জেলায় এবার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান না করা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'দেখি, আমি এখনও কারও সাথে কথা বলি নাই এই বিষয়ে। আমি কথা বলি। তারপরে কালকে অথবা পরশু যাওয়ার আগে কথা বলবো।'

এরআগে উপদেষ্টা শহরের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র বনরূপা এলাকা, ক্ষতিগ্রস্ত বাজার, বনরূপা মসজিদ ও মৈত্রী বিহার পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলেনএবং যতটুকু সম্ভব ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং বনরূপা মৈত্রী বিহারের হামলার ঘটনায় বিহারাধ্যক্ষকে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন।

১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরে মো. মামুন নামে এক বাঙালি যুবককে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করে পাহাড়িরা। এরজেরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালায় ও খাগড়াছড়িতে এবং ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে চারজন পাহাড়ি ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটে।

সর্বশেষ ১ অক্টোবর খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে সোহেল রানা নামের এক শিক্ষককে অধ্যক্ষের কক্ষেই পিটিয়ে হত্যা করে পাহাড়িরা। এরপর থেকেই পাহাড়ে পাহাড়ি বাঙালি উত্তেজনায় অস্থিরতা দেখা দেয়।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ কমিটির হিসেব বলছে- সহিংসতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ভবনে রাখা ৯টি গাড়ি, ২টি মাইক্রোবাস, ৬টি সিএনজি অটোরিক্সা, ৬টি ট্রাক, ৩টি বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া ১৮টি বাড়ি, ৮৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ৮৫টি ভাসমান দোকান, ১টি মসজিদ, ১টি বৌদ্ধ বিহার, ২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। ওই সহিংসতায় ৯ কোটি ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

রাঙামাটির সহিংসতায় গত ২১ সেপ্টেম্বর বিশেষ আইনশৃঙ্খলায় বৈঠকে অংশ নিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি লে. জেনারেল (অব:) আব্দুল হাফিজ রাঙামাটি আসেন।

আর গত ৩০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতার ঘটনায় সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী রাঙামাটির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।

ইএ