আজ (মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর) সকালে সচিবালয়ে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। ফল ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি জানান, সুন্দরবনে গড়ে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে দুটির বেশি বাঘ আছে।
দিনে কিংবা রাতে বনের রাজাদের চোখ ফাঁকি দিয়েই গোপন ক্যামেরায় উঠে এসেছে বাঘের অলস কিংবা কর্মচঞ্চল সময়ের ছবি। সে সংখ্যাটি একেবারে কম নয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত গবেষকদল প্রায় ১১ লাখ ছবি সংগ্রহ করেছে, যা এখন উচ্চতর গবেষণার জন্য যাচাই বাছাই হচ্ছে। আর এই ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতির বদৌলতে জানা যাচ্ছে, সুন্দরবনে বাড়ছে অতিবিপন্ন বাঘের সংখ্যা।
সবশেষ জরিপের ফল ৬ হাজার বর্গমিটার সুন্দরবনের ৬শ’ ৫টি অঞ্চলে বাঘ মিলেছে ১২৫টি, যার মানে প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘ আছে ৩টির কাছাকাছি। ৩ কোটি টাকা ব্যয়ের বাঘ শুমারি প্রকল্পের হিসাব ধরে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলছে, যা আগের তুলনায় মোটামুটি ১০ শতাংশ বেশি।
সুন্দরবনের চিত্র তুলে ধরে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, 'বাঘের মূল কমে চোরাশিকারির কারণে। সুন্দরবনে যে জলদস্যু ছিল তাদের সাথে এই চোরাশিকারিদের সংযোগ ছিল। আজ থেকে ৬ বছর আগে র্যাব, কোস্টগার্ড, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট ও পুলিশ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুন্দরবনকে জলদস্যু, বন্যদস্যু মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।'
সুন্দরবনের সীমানায় গত সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চান সাংবাদিকরা।
এর জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কিছু উদ্যোগ নেয়ার কারণে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। এখন সুন্দরবনের যে হুমকিটা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আছে, সেটা বাস্তবতা থেকে সরে যায়নি বরং এখনো আছে। রামপালে যে বিষয়টা আছে সেটা যাচাই করা হবে সত্য কীনা। সুন্দরবন বাঁচাতে হবে, এটা বৈশ্বিক ঐতিহ্যের পাশাপাশি শালবন বাঁচানোরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, স্থানীয় পরিবেশে কী মাত্রায় দূষণ ছড়াচ্ছে তা পুনঃযাচাই করা হচ্ছে। এ সময় সুন্দরবনকে রক্ষার পাশাপাশি সুন্দরবনের পর্যটকদের নিয়মের মধ্যে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন রিজওয়ানা হাসান।
সুন্দরবনে গড়ে ওঠা হোটেল, রিসোর্ট, অগ্নিকাণ্ড ও চোরাশিকারিদের নিয়েও তার কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ও রাত্রিযাপনের ইস্যুতে পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, ১৫ অক্টোবর হোটেল মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ ব্যাপারে ২০ অক্টোবরের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
বাঘ শুমারি প্রকাশের এ অনুষ্ঠানে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মান অনুসারে সুন্দরবনে বাঘের ঘনত্ব হওয়া উচিত প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে ৪ দশমিক ৫টি। এ হিসেবে সুন্দরবনে মোট বাঘ থাকা উচিত ২৭০টি।