জুলাইয়ের রক্তাক্ত যাত্রাবাড়িতে জুলুমশাহীর শত অত্যাচার, বুলেট আর বেয়নেটের নির্মমতার পরেও স্বৈরাচার পতনে যারা ছিল একাট্টা।
ছাত্র, শিক্ষক, মুটে মজুরের এ প্রতিরোধের দেয়াল গড়তে কত প্রাণ যে ঝরে গেছে তার হিসাব এখনও মেলেনি। তবে সাধারণ একটি হিসাব মতে- কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে পুরো জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত চলা গণআন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে এই যাত্রাবাড়িতে শহীদ হয়েছেন অন্তত অর্ধশত ছাত্র-জনতা।
অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা নেয়া সেসব শহীদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে গণআন্দোলনের লাইটহাউজ যাত্রাবাড়িতে নাগরিক কমিটির এই আয়োজন। যেখানে এসেছেন নৈশপ্রহরী আলমগীরও। ১৯ জুলাই পুলিশের গুলি যার ঊরুর এক পাশ দিয়ে ঢুকে আরেক প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে গেছে। এভাবে মঞ্চ কিংবা দর্শক সাড়িতে বসতে থাকতে দেখা গেছে শহীদদের বাবা, পরিবার ও স্বজনদের।
আন্দোলনের সময় পায়ে গুলি লাগা নৈশপ্রহরী আলমগীর। ছবি: এখন টিভি
আলমগীর বলেন, 'ঢাকা মেডিকেলে দুই মাস ভুগছি, অপারেশন করেনি। এরপর সিএমএইচে গিয়ে অপারেশন করেছি। পায়ের ভেতর রড দিয়ে রাখছে। সিএমএইচে গিয়ে আমি চিকিৎসা পাচ্ছি। এখনও আমি পুরোপুরি সুস্থ নেই।'
তাদের স্মৃতিচারণ শুনে নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা ইসলাম জানান, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যে মর্যাদা প্রত্যাশিত ছিল, শহীদ ও আহতদের পরিবারগুলো তা পাচ্ছেন না। এ প্লাটফর্মের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা উচিত খুনের বিচার।
আখতার বলেন, 'যারা যাত্রাবাড়িতে জীবন দিয়েছেন, সারাদেশে যারা জীবন দিয়েছেন। তারা কিন্তু এমনি এমনি জীবন দেননি। তারা নতুন এক বাংলাদেশ চেয়েছেন বলেই তারা জীবন দিয়েছেন। নতুন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে। তাদের প্রথম দায়িত্ব শহীদ এবং আহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা। তাদের দ্বিতীয় দায়িত্ব হচ্ছে যারা খুন করেছে, যারা হুকুম দিয়েছে, যারা অস্ত্র উঁচিয়ে ধরেছে তাদের প্রত্যেককে আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা।'
সামান্তা বলেন, 'আমাদের এই দু'মাসের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে নানা রকমের বিভাজন এবং নানা ধরনের দু;দুশ্চিন্তা আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমাদের শহীদ পরিবারদের সাথে এবং আহত পরিবারদের সাথে এমনভাবে নিষ্ক্রিয় একটা ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিচার এবং চিকিৎসার আশায়। এই জিনিসগুলো আমরা দেখতে চাই না।'
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর স্নিগ্ধ বলেন, আহত ও শহীদ পরিবারগুলো যাতে সহজেই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে সে লক্ষ্যে শিগগিরই একটি হটলাইন খোলা হবে।
মীর স্নিগ্ধ বলেন, 'বিগত সরকারের কোনো কাপুরুষ দোসরদের নাম যেন আমার এই বীর আহত ভাইদের পাশে লেখা না হয় সেটি নিশ্চিত করা আমার একটি বড় দায়িত্ব। এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এবং এই চ্যালেঞ্জটার জন্যই আমরা একটু কিছুটা সমস্যা ফেস করছি।'
শহীদদের একটি নির্ভুল তালিকা প্রণয়নে কাজ চলছে বলেও জানান, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের এই নেতা।