কৃষি
দেশে এখন
0

বন্যপ্রাণী কমায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে নেত্রকোণায়

ধানের উৎপাদন থেকে নেত্রকোণার অর্থনীতিতে আসে বড় জোগান। তবে সম্প্রতি পরিবেশ বিপর্যয় ও মানবসৃষ্ট কারণে বন্যপ্রাণী কমায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, বন্য প্রাণী হত্যা বন্ধ করা না গেলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও কৃষির ওপর।

পাহাড়, নদী আর হাওরবেষ্টিত জেলা নেত্রকোণা। এখানকার কৃষকরা বছরে ধান বিক্রি করেই আয় করেন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

দীর্ঘদিন ধরেই উর্বর মাটি আর অনুকূল পরিবেশে ধান উৎপাদনে এগিয়ে রয়েছে এই জেলা। তবে গত কয়েক বছরে পাহাড়ি সীমান্তবর্তী এসব এলাকায় বন উজাড়ের প্রভাবে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি আর খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর বন্যপ্রাণী হত্যার প্রভাব পড়েছে কৃষি অর্থনীতিতে।

সম্প্রতি কলমাকান্দা উপজেলার পাঁচগাঁও সীমান্তে ধানক্ষেতে প্রায় ২০ ফুট লম্বা একটি অজগর আশ্রয় নেয়। পরে স্থানীয়রা অজগরটি ধরে দা দিয়ে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেই ভিডিও।

স্থানীয় একজন কৃষক বলেন, 'আমাদের এলাকায় রাসেলস ভাইপার নেই। কিন্তু যেকোনো সাপ দেখলেই সেটা মারছে আর বলছে রাসেলস ভাইপার মারতেছি। আর এর মধ্যে তো কিছু উপকারীও থাকতে পারে। আমরা যেহেতু উপকারী জিনিস চিনি না, এর প্রভাব তো ফসলে পড়বেই। কোনো একটা ক্যাম্পেইন হয়ে জিনিসগুলো আমাদের চেনালে এগুলো নষ্ট হতো না।'

স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়ে আগে বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ বন্যপ্রাণীর দেখা মিললেও এখন তা অনেক কম। এর বড় কারণ বনভূমি উজার ও বন্যপ্রাণী হত্যার প্রবণতা। পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্যপ্রাণী হত্যা বন্ধ করা না গেলে এর প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও কৃষির উপর।

সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসংয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত প্রসাদ বলেন, 'সবার কাছে আমাদের ম্যাসেজ থাকবে যে, যেকোনো প্রাণী পরিবেশের জন্য উপকারী। মরা কোনোভাবেই যেন এদের হত্যা না করি।'

বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ওয়াহিদুর রহমান বলেন, 'যে সাপগুলো আসলে পরিবেশের জন্য ভালো, পরিবেশের জন্য উপকারী, আমাদের ইকোসিস্টেমকে ব্যালান্স করে রাখে। বেশিরভাগই সেই সাপগুলোকে মেরে ফেলছে। তে আমাদের আগামী দিনে এক ধরনের সংকট তৈরি হবে পরিবেশগত।'

কৃষি বিভাগ বলছে, পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে বালাইনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ফাঁদ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া উপকারী প্রাণী হত্যা বন্ধেও সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে।

নেত্রকোনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, 'তুলনামূলকভাবে তাদের প্রিজারভেশন বা বংশবৃদ্ধি কিছুটা হলেও বাড়ছে। আমরা আশা করি জনগণ বা কৃষকরা যদি একটু সচেতন হয় আর আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী যদি জমিতে কাজগুলো করেন তাহলে আমাদের প্রকৃতির ছোটখাট সমস্যাগুলো ওভারকাম করা সম্ভব হবে।'

নেত্রকোণার সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা দুর্গাপুর ও কলমাকান্দায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি বনভূমি রয়েছে। যেখানে প্রাকৃতিক গাছপালা কমায়, কমেছে বন্যপ্রাণীর অবাসস্থল। গেল তিন মাসে এ অঞ্চলে অন্তত ১০টি বেশি অজগর ও কয়েক শতাধিক সরীসৃপ প্রাণী হত্যার শিকার হয়েছে।

এসএস