কেন্দ্রের নির্দেশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকাল ১০টায় দিনের প্রথম আক্রমণ শুরু করে পুলিশ। নেতৃত্বে শাহবাগ থানা ও সংশ্লিষ্ট সার্কেলের পুলিশ কর্মকর্তারা। কারফিউ ভেঙে এখানে অবস্থান নেয়া মানুষের সংখ্যা দেড়শ' কি দু'শো। যাদের অধিকাংশই কিশোর-তরুণ। কাছ থেকে এরকম নির্বিচারে আক্রমণে চালায় দুই দিক থেকে আসা পুলিশের দুইটি দল।
এরপর চলে ধরপাকড়। রিক্সা করে শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে যাওয়া দুই যুবককে আটক করা হয় শুধুমাত্র 'রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো' বলার কারণে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আশপাশের এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ছাড়া তখন কার্যত শূন্য। তবুও যখন যাকে দেখেছে পুলিশ, তল্লাশি চালিয়েছে, আটক করেছে। থমথমে ঢাবি ক্যাম্পাসে তখন টিপটিপ বৃষ্টি। এর মধ্যে কারফিউ ভেঙে রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ। উপর থেকে আবার পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে বার্তা আছে, এটাও ক্লিয়ার করার।
এই বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ঝটিকা মিছিল করে ভিসি চত্বরের দিকে চলে যান শিক্ষকরা। আশপাশে যখন তখন মুহুমুহু গুলির আওয়াজ।
মূলত লং মার্চ কর্মসূচির পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শাহবাগে ঢোকার লক্ষ্য ছিল ছাত্র-জনতার। তাদের গতিরোধ করতে রাজধানীর চানখারপুলে নির্বিচারে গুলি চালাতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে একের পর এক লাশ ফেলতে দেখা যায় কিছু পুলিশ সদস্যকে। ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর সাড়ে ১২টা বা পৌণে একটা। অর্থাৎ বিপ্লবের মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে।
এমন পরিস্থিতিতে সাইরেনে শব্দে ভারী হয়ে ওঠে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে তখন আমরা শাহবাগ চত্বরের দিকে এগোই।
পৌণে দুইটা থেকেই শাহবাগ চত্বরের পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। কারফিউ ভেঙে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হতে থাকে হাজার হাজার ছাত্র জনতা।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যে লাখো জনতার উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে যায় শাহবাগ চত্বর। এর মধ্যে খবর আসে, পালিয়েছে শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সারা শহরের মানুষের গন্তব্যে পরিণত হয় এই শাহবাগ, বিপ্লবের কেন্দ্রে পৌঁছতে গিয়ে তখনও বিভিন্ন সড়কের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারান শত ছাত্র-জনতা।