ঝাক বেঁধে আসা শেখ হাসিনা সরকারের বেপরোয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বুলেটকে তুচ্ছ করে দিয়েছিলে যে গণজোয়ার, বিপ্লবীদের সেই রক্তস্রোতের উৎসে আছে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহীদ মিনার।
দেড় দশকের মসনদ যখন গণরোষে ভেঙে পড়েছে সমূলে, যখন দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা, বিপ্লবীদের সেই দিনেও এই শহীদ মিনার ঘিরে কত আতঙ্ক। নির্বিচারে গুলি চলেছে, থামিয়ে দিতে ছাত্র-জনতার স্লোগান।
অভ্যুত্থানের নবম দিনে আবার ভিড় জমেছে এই স্মৃতির মিনারে। তবে, মুক্তির জন্য নয়, বিচারের জন্যে। মিছিলের কাতারে অনেক বিপ্লবীর জায়গায় আজ দেখা যাচ্ছে অভিভাবকদের, তাদের বুক ভরা শুধু হারানোর বেদনা আর হাহকার। হাতের প্লাকার্ড, ব্যানার আর ফেস্টুন আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে ভয়াবহ স্মৃতির কথা। তারা রাষ্ট্রযন্ত্র সন্ত্রাসের মত ব্যবহার করে এত মানুষ মারার বিচার চান।
নিহত একজনের বোন বলেন, 'আমার ভাইয়ের শহীদি মর্যাদা চাই রাষ্ট্রীয়ভাবে। আর আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে, নিরস্ত্র বাহিনীর ওপর যারা এভাবে বুলেট চালিয়েছে আমি তাদেরও বিচার চাই।'
মুক্তির একটি ভোর আনতে যারা চলে গেছে, সেসব পরিবারের তো সবই গেছে। কিন্তু যারা রয়ে গেছেন দুঃসহ সব স্মৃতি নিয়ে? হাসপাতালে কাতরানো সামর্থ্যহীন সে পরিবারগুলোও কথা বলেছেন এখানে। তারা চান, তাদের পাশে দাঁড়াক রাষ্ট্র।
একজন অভিভাবক বলেন, 'ছাত্র-জনতা তাদের পাশে আছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সরকারও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আর তাদের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারা পুনরায় এ সমাজে ফিরে আসতে পারবে কি না, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে কি না তা আমরা জানি না।'
শহীদদের এই স্মরণ অনুষ্ঠানে চোখ মুছতে দেখা গেছে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের। শিক্ষকরা বলছেন, এমন দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা হোক, যাতে আর কোনো শাসক এমন দানব হয়ে উঠতে না পারে।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান বলেন, 'এটা হলো বিপ্লবী সরকার, বিপ্লবী কায়দায় বিচার করতে হবে। সাক্ষ্য আইন নামের আজেবাজে জিনিস দিয়ে বিচার হবে না। প্রকাশ্যে বিচার করতে হবে, যেভাবে বিচার হয়েছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর। আমি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, 'এই যে মানুষের দীর্ঘশ্বাস, মানুষের অভিশাপ, নির্যাতন, হত্যা, গুম, খুন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, নির্বাচনের নামে প্রহসন এগুলোকে দরে পুরো বাংলাদেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছিল। ২০২৪ এ একটি রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানকে জন্ম দিয়েছিল।'
সব হারানো এ পরিবারগুলো, আহত ক্ষতবিক্ষত এ পরিবারগুলো গণহত্যার বিচার দাবিতে একাট্টা। তারা বলছেন, সরকার যতক্ষণ না এসব হত্যার বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা পরিবারগুলোর।