রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ নামে শিক্ষার্থীদের আজকের কর্মসূচিতে অনলাইনে দেখা গেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র, পত্রিকার ছবি কিংবা হাতে আকা কোনো ছবি। তবে রাজপথেও দেখা গেছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
শহিদদের স্মরণের গান গেয়ে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। জুলাইকে রক্তাক্ত আখ্যা দিয়ে নিহত ছাত্রদের স্মরণ করেন তারা।
মৌন মিছিলের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নিপীড়ন বিরোধী সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। পরে ভিসি চত্বর ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে সমাবেশ করেন। শিক্ষার্থী হত্যার বিচার, ক্যাম্পাস থেকে সব বাহিনী সরিয়ে নেয়া ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে শুক্রবার বিকেল ৩টায় ঘোষণা করেন 'দ্রোহ যাত্রা' নামে নতুন কর্মসূচি। এখানে শিক্ষকদের সঙ্গে মিছিলে শামিল হন শিক্ষার্থীরাও।
নিপীড়ন বিরোধী সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ছবি: এখন টিভি
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের সহপাঠীরা ভয়ঙ্করভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আমরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছি না। ঢুকলে পুলিশের কাছে কেন জবাবদিহিতা করতে হবে। আমাদেরকে দমানো যাবে না। যত দমন করার চেষ্টা করা হবে, আমরা ততই সোচ্চার হব।’
শিক্ষকদের এই কর্মসূচির মাঝেই খবর আসে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে। যদিও দুপুর নাগাদ এই কার্যালয়ের ঘেরাওয়ের কর্মসূচিতে জড়ো হন নাগরিক সমাজ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা বলেন, ‘এই আন্দোলনে দেশের জন্য সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ছবি: এখন টিভি
তারা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আটকে রাখা যুক্তিযুক্ত নয়। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশেন সুনাম নষ্ট হচ্ছে না। আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর যেভাবে হামলা করা হয়েছে তা মেনে নেয়া যায় না। উপাচার্যের নির্দেশ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুই হয় না। এর দায়ভার উনাকেও নিতে হবে।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা শুনেছি কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সম্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা খুশি, কিন্তু সন্তুষ্ট নই। কারণ এখনো ঢাকাসহ সারাদেশে আটক ছাত্র শিক্ষক, সাধারণ মানুষ বিনা বিচারে আটক আছে।’
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে এদিন রাজধানীর ফার্মগেটে সমবেত হন টিভি পর্দার তারকা, শিল্পী, পরিচালক ও কলাকুশলীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে ফার্মগেট থেকে সংসদ ভবনের দিকে মিছিল নিয়ে যাত্রা করেন তারা। মাঝপথে পুলিশ মিছিলটি আটকে দেয়।
তারকারা বলেন, ছাত্রদের নির্বিচারে হত্যার বিচারের দাবিতে আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি। আর কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ যেন না যায়। ছাত্রদের ৯ম দফার দাবিতে আমরা সংহতি জানাচ্ছি। নতুন প্রজন্মই পরিবর্তন আনবে।
সংহতি জানিয়ে ফার্মগেটে সমবেত হন টিভি পর্দার তারকা ও কলাকুশলীরা। ছবি: এখন টিভি
রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ কর্মসূচিতে উত্তাল ছিলো ঢাকার বাইরের নগরীও। বেলা ১১টার দিকে, ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বন্ধ হয়ে যায় সড়কের যান চলাচল।
হত্যা ও হামলা-মামলার বিচারের দাবিতে একই সময় মানববন্ধন ও মৌন মিছিল করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকরা। নিহতের ঘটনায় বিচার ও আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান তারা।
একইভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকরা। অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে আজ কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এখানে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়।