বৃষ্টিস্নাত এই সাগরলতা পরম মমতায় আঁকড়ে ধরে রাখে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি। বাতাসে ভেসে আসা বালুকনা। এই সাগরলতায় আটকে তৈরি করে উঁচু বালির ডিবি। একসময় কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতজুড়ে এই বালিয়াড়ি চোখে পড়তো। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, লোকজনের বিচরণ ও সৈকত ঘিরে অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে এখন আর সাগরলতা খুব একটা চোখে পড়ে না।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই জোয়ারের পানিতে কক্সবাজারে ভাঙে সমুদ্র তীর। বিলীন হয় স্থাপনা। উপড়ে পড়ছে ঝাউগাছ। এবারও বর্ষার শুরুতে জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়ায় সৈকতের ৪ কিলোমিটার অংশের প্রায় ৬০০ মিটার ভেঙে বিলীন হয়েছে সাগরগর্ভে। শৈবাল পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্টের মাঝামাঝি এলাকায় উপড়ে গেছে দেড় শতাধিক ঝাউগাছ ও ৩ হাজার চারা। ভেঙেছে শৈবাল পয়েন্টের বিচ ক্যাফের প্রবেশপথ। ভাঙনের ঝুঁকিতে পানির ট্যাংকও। এতে সৌন্দর্য হারাচ্ছে সৈকত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘সৈকত ভেঙ্গেছে প্রচুর জোয়ারের পানিতে।’ আরেকজন বলেন, ‘তুফান যখন আসে তখন পানি বেড়ে গিয়ে ঝাউগাছ ভেঙ্গে যায়।’
সী-সেইফ লাইফ গার্ডের সদস্য রশীদ আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন গাছপালাসহ বেড়িবাধেঁর যে বালির ব্যাগ ছিল তাও ভেঙ্গে সমুদ্রে চলে গিয়েছে।’
গত কয়েকদিনে জোয়ারের পানি চলে আসে লাবণী পয়েন্টে অবস্থিত জেলা প্রশাসনের স্থাপনা, ট্যুরিস্ট পুলিশের স্থাপনা, ছাতা মার্কেট, ঝিনুক মার্কেট, সুগন্ধা পয়েন্টের অস্থায়ী ঝুপড়ি দোকানঘর, ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্কের কাছে।
উপকূল সুরক্ষিত রাখতে সৈকতের বিশাল অংশে ঝাউগাছ রোপণ করে বনবিভাগ। সেই ঝাউগাছও টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরওয়ার আলম বলেন, ‘ঢেউয়ের আঘাত প্রকট আকারে বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে।’
এ অবস্থায় জিও টিউব বসিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে আসছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়াও সরকার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত রক্ষায় স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধটি উত্তরে নাজিরারটেক থেকে দক্ষিণে কলাতলীর মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যন্ত সেটি পরবর্তীতে নাজিরারটেক থেকে লাবনী পয়েন্ট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কক্সবাজার পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিথুন ওয়াদ্দেদার বলেন, ‘নতুন ডিজাইনে আমাদের নতুনভাবে বাঁধ নির্মাণের জন্য ডিপিপিতে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে।’
এই বাঁধ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে আগের ডিপিপি সংশোধন করে প্রায় ৬শ' কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।