দিনভর হাতুড়ি বাটালের শব্দে নকশা কাটার সময় ফুরিয়েছে। নগরীর দায়রাপাকের মোড়ে আধুনিক সব মেশিনের সাহায্যে পার্টেক্স বা মালয়েশিয়ান বোর্ডে চলে নকশার কাজ। রাজ্যের সব কাজ সেরে ফেলেন মাত্র দু'জন শ্রমিকই। টুকরো করে কাটা বোর্ডে একপাশে বানানো হচ্ছে খাট, অন্যপাশে চলছে রঙের আঁচড়। দ্রুতগতির কাজে একটি খাট প্রস্তুতে সময় লাগছে মাত্র দু'দিন। দেখতে সুন্দর, সাথে স্বল্পমূল্যের এসব আসবাবই মূলত নগরজীবনে প্রয়োজনের সহজ সমাধান।
কারখানার একজন কর্মচারি বলেন, ‘কাঠের খাট বানাতে মিনিমাম দুই দিন সময় লাগে। সাথে আবার রঙের কাজ করতে একদিন লাগে। আর আমাদের রঙসহ সব কাজ করতে একদিন সময় লাগে। কাঠের কাজে অনেক খাটনি আছে এই কাজে তেমন একটা খাটনিও নেই।’
দৌড়ঝাঁপের নগরে সময় স্বল্পতায় চাহিদা পূরণই যখন লক্ষ্য, তখন পারটেক্স বোর্ড, কাঠকে ঠেলেছে নগর থেকে দূরে। প্রাচীনকাল থেকে আসবাবপত্র তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত কাঠ এখন মিলছে খুব কম। বর্তমানে কাঠের দাম বৃদ্ধি, আসবাব তৈরিতে বাড়তি খরচ ও সময় লাগার কারণে কাঠের ফার্নিচারেরও চাহিদা কমেছে ক্রেতাদের।
এর বিকল্প হিসেবে বাজার দখল করেছে প্রসেসড উডের পার্টিক্যাল, ভিনিয়ার্ড, প্লাইবোর্ডসহ স্টিল ও প্লাস্টিকের তৈরি আসবাবপত্র। নান্দনিক কারুকাজ ও সাশ্রয়ী দামের কারণে ক্রেতার কাছে কদর বাড়ছে এসব ফার্নিচারের।
একজন বোর্ড ফার্নিচার ব্যবসায়ী বলেন, ‘কাঠের ফার্নিচারের দাম বেশি হওয়ায় মানুষ কিনতে পারতো না। এখন এই বোর্ডের ফার্নিচার আসাতে মানুষ অল্প দামের মধ্যে সুন্দর সুন্দর ফার্নিচার কিনতে পারছে।’
নগরীর গ্রেটার রোডের ফার্নিচার পট্টির দুই শতাধিক দোকানে বিক্রি হচ্ছে খাট, শো-কেস, ওয়ারড্রব, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিলসহ বোর্ডের বিভিন্ন আসবাবপত্র। কিছুটা কমে পছন্দসই ফার্নিচার কিনতে এসব দোকানেই আস্থা রাখছেন ক্রেতারা।
একজন ফার্নিচার ক্রেতা বলেন, ‘কাঠে অনেক ফাঁক থাকে, এছাড়াও কিছুদিন পর কাঠে অনেক সমস্যা হয়। কাঠে ঘুণে ধরে। এর এগুলো সহজেই বহন করা যায়।’
পাশাপাশি হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে মিলছে সেগুন ও মেহেগনির মতো উন্নত জাতের কাঠের তৈরি ফার্নিচার বিক্রি হচ্ছে ১০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত। যদিও অন্যান্য ফার্নিচারের চাকচিক্য আর নানান রঙ-ডিজাইনের সাথে পাল্লা দিয়ে তাই অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে কাঠের ফার্নিচারের ব্যবসা। তবে আমদানি নির্ভর কাঁচামালের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে মুনাফা কমেছে বোর্ড ফার্নিচার ব্যবসায়। তাই এ খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চান ব্যবসায়ী নেতারা।
গ্রেটার রোড ফার্নিচার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. নাজমুল হোসেন বলেন, ‘করোনার পর আমাদের ব্যবসাটা অনেকটাই কমে গেছে। তখন আমাদের বেশকিছু লোন দিয়েছিল, তারপর আমাদের ব্যবসাটা কিছুটা উন্নতি হচ্ছিল। তারা আর পরবর্তীতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি।’
নগরীর গ্রেটার রোড, নওদাপাড়া বিসিক শিল্প এলাকায় প্রায় আড়াইশ' বোর্ড কারখানা ও দোকান রয়েছে। সেখানে বছরে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ফার্নিচার বিক্রি হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।