দেশে এখন
0

এক যুগে মশা মারতে খরচ ১২শ' কোটি টাকা!

রাজধানীতে বেড়েছে মশার উৎপাত। এর সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সিটি করপোরেশনের মশক নিধন ব্যয়। গত ১২ বছরে ঢাকার মশা মারার আয়োজনে খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আইন করে মশা নিধনে ফগিং নিষিদ্ধসহ কীটনাশক প্রয়োগে অনুৎসাহিত করলেও, বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। বিশেষজ্ঞদের মত, বিজ্ঞানভিত্তিক মশক নিধনে গুরুত্ব দেয়াসহ বছরজুড়েই চালাতে হবে কার্যক্রম।

মশার উৎপাত নিয়ে অস্বস্তি বেড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। যা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে বছরের পর বছর ফগিং ও কীটনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এর সঙ্গে সময়ে সময়ে যুক্ত হয়েছে ড্রোন উড়িয়ে মশা ও লার্ভার উৎস শনাক্তকরণ। জলাধারে ছাড়া হয়েছে গাপ্পি মাছ, ব্যাঙ, হাঁস ও তেলাপিয়া মাছ।

এতসব কার্যক্রমের পরেও মশার আক্রমণ কমেনি রাজধানীতে। যার হিসাব মেলানো যায় বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পাওয়া ডেঙ্গু রোগীর পরিসংখ্যান থেকেই। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের হিসাব গ্রাফিক্স সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে শুধু ঢাকাতেই মশা বেড়েছে দ্বিগুণ।

অন্যদিকে বৃষ্টিতে হরহামেশাই ডুবছে নগরী। এতে যেখানে সেখানে জমে থাকার পানি মশার দ্রুত বিস্তারে সহায়ক হচ্ছে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে কতটা বিজ্ঞানসম্মত উদ্যোগে নিয়েছে সিটি করপোরেশন?

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, 'প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি ভাগে ভাগ করে কমিটি করতে হবে। এ কমিটিতে থাকবে ক্লিনার ডে প্রতিটি বাসাবাড়িতে গিয়ে গিয়ে নাগরিককে সম্পৃক্ত করবে। কীভাবে সে নিজে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সাথে আরেকজন ব্যক্তি থাকবে তার কাজ হবে, যেখানে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা সম্ভব না, সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করা।'

ঢাকার দুই সিটির চলতি অর্থবছরে মশা মারার বাজেট ১৫২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে উত্তরের ১২১ কোটি ৮৪ লাখ আর দক্ষিণের ৩১ কোটি এক লাখ টাকা। আর গত ১২ বছরে ঢাকার মশা মারার আয়োজনে খরচ হয়েছে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা।

এই বাজেটের টাকা ব্যয় হয়েছে মশা নিয়ন্ত্রণের নানা যন্ত্রপাতি, কীটনাশকসহ আরও অনেক কাজে। যা মশক দমনের বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় গুরুত্ব পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার আরও বলেন, 'সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনাটা আসলে কী? প্রথম হচ্ছে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, দ্বিতীয় হচ্ছে জীবজ নিয়ন্ত্রণ আর তৃতীয় হচ্ছে কীটনাশক বা কেমিক্যাল ও চতুর্থ হচ্ছে জনগণকেব সম্পৃক্ত করা। এই চারটিকে একসঙ্গে করে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ ঘটাতে পারলে তখনই মশার নিয়ন্ত্রণ হবে।'

দিনের পর দিন ফগিং ও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগে জীববৈচিত্র্য ক্ষতির মুখে পড়ছে। সেই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

আইসিডিডিআরবি'র ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশন ড. শফিউল আলম বলেন, 'সিটি করপোরেশনের যারা ফগিং করছে, আমরা নিজেরাও আমাদের বাসাবাড়িতে ফগিং করি, সেখানে সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ হচ্ছে কি না? জনস্বার্থে যতটুকু নিয়ম রয়েছে কেউ যদি তার থেকে বেশি করে থাকে তাহলে কিন্তু আমাদের প্রকৃতিতে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া থাকবেই।'

আইন করে মশা নিধনে ফগিং নিষিদ্ধ করছে বিভিন্ন দেশ। কমিয়ে আনা হচ্ছে কীটনাশক প্রয়োগও। যদিও বাংলাদেশে এ চিত্র ভিন্ন। তাই এডিস নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সারা বছরজুড়েই মশক দমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর