নরসিংদীর হুগলাকান্দি গ্রামের কৃষক আহমদ আলী। বছর ১৫ আগেও তিনি অন্তত ৩শ শতকের বেশি জমিতে পাট চাষ করতেন। বর্তমানে সে আবাদ নেমে এসেছে মাত্র ২০ শতাংশে।
পাটচাষি আহমদ আলী বলেন, 'আবাদ করতে লাগে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আবার বিক্রিও হয় ওই একই দামে। এতে লাভ হয় না। মাঝে মাঝে লোকসানও হয় লেবার খরচ দিয়ে। তাই চাষ কমিয়ে দিয়েছি।'
আহমদ আলীর মতো একই অবস্থা জেলার অন্য কৃষকদের। জৈষ্ঠ্য কিংবা আষাঢ়ে ফসলের মাঠে এখন আর তেমন দেখা মেলেনা বাতাসে দোল খাওয়া বিস্তীর্ণ সবুজ পাট খেতের। বর্ষাকালে পর্যাপ্ত পানি না থাকা, পাটের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, শ্রমিকের বাড়তি মজুরি, দালালের দৌরাত্ম্য, কৃষি বিভাগের উদাসীনতাসহ বিভিন্ন কারণে পাটচাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। আর যারাও করছেন বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচের সাথে মিলছে না আয়ের হিসাব। কৃষকের মুখেই শোনা যাক পাটচাষের একাল-সেকাল।
কৃষকদের একজন বলেন, 'পানির অভাব ও লেবার খরচ বেশি হওয়ায় পাট চাষ করা হচ্ছে না তেমন।'
আরেকজন বলেন, 'দালালের কাছ পাট বিক্রি করতে হয়। এতে আমাদের লাভ হয় না।'
গত ১০ বছরে নরসিংদী জেলায় পাট চাষ কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। আর দুই দশকে সে পরিমাণ প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি। সেই সাথে কমেছে পাটচাষি।
২০১৩ সালে পাট চাষ হয় ৪ হাজার ৪১৪ হেক্টর, ২০১৫ সালে ৩ হাজার ৪৩ হেক্টর, ২০২০ সালে ২ হাজার ৬৮৫, ২০২৪ এ পাটচাষ ২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে।
কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ন্যায্যমূল্যে মাঠ থেকে পাট ক্রয় করা গেলে কৃষকরা লাভবান হতো উল্লেখ করে পাটের সুদিন ফেরানোর চেষ্টা চলছে বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অপরদিকে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলছেন, বন্ধ থাকা পাট মিলগুলো চালু করলে বাড়বে পাটের কদর।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, 'কৃষকের কাছ থেকে সরকার যদি সরাসরি পাট ক্রয় করে তাহলে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহী হবে।'
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, 'এরিমধ্যে ৬ পাটকল চালু হয়েছে এবং অন্যগুলো চালু করতে ব্যস্ত সময় পার করছি।'
কৃষকরা পাটের ন্যায্যমূল্য পাবে, নরসিংদীর মাঠে মাঠে আবারও সবুজ পাটগাছ দোল খাবে দখিনা বাতাসে, এমনটাই প্রত্যাশা কৃষি সংশ্লিষ্টদের।