দেশে এখন
0

হাওর পাড়ের জীবন বেঁচে থাকে কেবলই ভাগ্যের ওপর

সুনামগঞ্জ

বৃষ্টিপাত না থাকায় সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। তবে বন্যার পানির চাপ গিয়ে পড়ছে হাওর এলাকার বাড়িঘরে। বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। প্রতিবছর বন্যা শেষে হাওরপাড়ের মানুষগুলোর হৃদয়ে যে ক্ষত তৈরি হয় তা নিরসনের কোনো চেষ্টা দেখা যায় না। নিরুপায় হাওর পাড়ের জীবন বেঁচে থাকে কেবলই তার ভাগ্যের উপর।

শান্ত, নিরব-সফেদ হাওর স্থানীয়দের কাছে বড়ই বেমানান। প্রকৃতির বৈরী আচরণ; বর্ষার নতুন জলে হাওরে ভেসে আসা কচুরিপানার বিশাল মিছিলকে সরিয়েছে, নিয়তির পালে হারিয়েছে বড় বড় মহাজনি নাও, ছোট ছোট নাইওরি নৌকা, স্রোতের টানে চলা বাঁশের চাইল। এখন হাওরে কেবল আছে ঢলের পানির সাথে জনপদের বিষাদের নতুন নতুন উপ্যাখান।

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা ইউনিয়নের আলিফনুর। ছোট নৌকায় বিধ্বস্ত ঘরের খুঁটি ধরে ৮০ ঊর্ধ্ব মা আর তার স্ত্রীসহ পালিত মুরগি নিয়ে পানিবন্দি জীবনের ষষ্ঠ দিন অতিক্রম করছেন। সুনামগঞ্জের উঁচু এলাকায় পানি কমলেও তার ঘরে এখনো কোমর সমান পানি। কেবল আকাশ ছাড়া বাকি সব পথ পানিতে নিমজ্জিত থাকায় খাবার, বিদ্যুতবিহীন মহাসংকটে চোখের জলই একমাত্র ভরসা।


বন্যার সঙ্গে বাঁচতে অভ্যস্ত হাওর অঞ্চলের মানুষ এখন প্রকৃতির এই রূঢ় আচরণে স্বপ্ন দেখারও সাহস করেন না। বছরের পর বছর বন্যায় সব কিছু হারাতে হারাতে এখন আর হারানোর কিছুই নেই তাদের। দুর্যোগে সহযোগিতা পাওয়ার চেয়ে জীবন বাঁচানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ তাদের কাছে।

হাওরের বাসিন্দারা বলেন, প্রত্যেক বছর এই বন্যা আসলে আমাদেরকে শেষ করে দিয়ে যায়। বছরের অন্য সময় আমরা কাজ করে চলতে পারি। কিন্তু বন্যার সময় আমরা অচল হয়ে পড়ি। আমাদের ঘর পানিতে ভেসে যায়, অনেক জিনিসপত্র ক্ষতি হয়। গরু-ছাগল পানিতে ভেসে যায়। অনেক কষ্ট হয়।

সুনামগঞ্জে এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৫০ হাজার পরিবার। আর্থিক ক্ষতির কোনো হিসেব নেই কারও কাছে। হাওর জনপদে বসবাসকারীরা বলছেন তাদের এই দুর্দশা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঠিক চিন্তা ভাবনা আর সমন্বিত পুনর্বাসন ব্যবস্থা।


হাউসের নির্বাহী পরিচালক সালেহীন চৌধুরী বলেন, 'সরকারের প্রণোদনা যাচাই-বাছাই করে তাদের কাছে পৌঁছানো প্রয়োজন। স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করার জন্য বিক্ষিপ্ত গ্রামগুলোকে পুনর্গঠন করে পরিকল্লিত আবাসন ব্যবস্থা সম্বলিত গ্রাম তৈরি করতে হবে।'

হাওরের এমন বেহাল দশায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, 'যদিও দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা কম তারপরও যে বরাদ্দ হয় তার সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। আমলাতন্ত্রের জটিলতা দূর করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে প্রচুর সময় ও বিনিয়োগের প্রয়োজন।'

দৃষ্টির সীমাজুড়ে শুধু পানি আর পানি। বন্যা যখন আসে, তখন শুধু সব ভাসিয়ে নিয়ে যায় না বরং সেই বন্যার পানিতেই মানুষের ঘরের দোরগোড়ায় বড় বিপদের শমন পাঠায়। পানির এই ভয়ংকর রূপ ভয় দেখায় হাওরাঞ্চলের প্রতিটা মানব প্রাণে। রাষ্ট্রের কাছে তাদের চাওয়া মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সুবিধাটুকু।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর