বিচার বিভাগের এজলাস বা বিচারকক্ষ দেখতে কেমন তা শুধু চলচ্চিত্র বা নাটকে দেখে সাধারণ মানুষ ধারণা করে। কিন্তু সত্যিই এজলাসের ভেতরে বিচারপতি কিভাবে আসেন, বসেন তা জানতে আগ্রহের কমতি নেই। প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিগণ এজলাসে যখন প্রবেশ করেন তখন কেমন হয় তার পরিবেশ, তাও অনেকের কাছে কৌতূহলের বিষয়। মামলার অভিজ্ঞতা ছাড়া তেমন কারোই আদালতের ভেতরে এজলাস দেখার সুযোগ হয় না।
বিশেষ করে প্রধান বিচারপতির আদালত, যেখানে সবার প্রবেশেরই সুযোগ থাকে না। এবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ভেতরের কার্যক্রম দেখার সুযোগ করে দিলেন প্রধান বিচারপতি। এজলাস থেকে একটি বিশেষ অধিবেশন সরাসরি সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়।
সোমবার (১০ জুন) বিকেল চারটার দিকে সুসজ্জিত আধুনিকতার ছোঁয়ায় গড়ে তোলা সর্বোচ্চ আদালতের এজলাসে আসেন প্রধান বিচারপতি। সঙ্গে আপিল বিভাগের অন্য সকল বিচারপতি। তার পেছনের সারিতে বসেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ। এর আগেই আসেন দেশের পাঁচ সাবেক প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির সামনের একপাশে বসেন তারা।
ঝুঁকিপূর্ণ দুর্বল ছাদ ও বৃষ্টিতে পানি পড়ার কারণে আপিল বিভাগের বিচার কাজের বিঘ্ন ঘটনায় বিচার পরিচালনা কক্ষের সংস্কার কাজ করানো হয় দুই মাস ধরে। বহু বছরের পুরোন এজলাসকে আধুনিকায়নের ছোঁয়ায় বদলে দেয়া হয়।
জনাকীর্ণ পরিবেশে বিশেষ অধিবেশন সবার অংশ গ্রহণে হয়ে ওঠে আনন্দমুখর। আধুনিক নকশা আর প্রযুক্তি নির্ভর আপিল বিভাগের আদালত হয়ে উঠেছে নান্দনিক ও আভিজাত্যপূর্ণ। আর এমন উৎসবমুখর আয়োজনের সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ দেয়া হয় গণমাধ্যমকে এই প্রথম দেশের কোনো আদালত থেকে সরাসরি সম্প্রচার ও ক্যামেরা নিয়ে সংবাদ সুযোগ পেল গণমাধ্যম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অ্যাটর্নি বলেন, 'বিচারক ও আইনজীবীদের সমন্বিত সহযোগিতা ও কর্মদক্ষতার মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার পাবে জনগণ।'
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, 'দলমতের উর্ব্ধে উঠে মেধাবীদের উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া উচিত।'
পরে প্রধান বিচারপতি বক্তব্য রাখেন। শুরুতেই ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদানও তুলে ধরেন তিনি।
বৃটিশ আমল থেকে যেসব বিচারপতি আইনজীবী দেশের বিচার বিভাগ এগিয়ে নিতে অবদান করেছেন তাদের কথাও তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধুকে হত্যা মামলা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করে বিচার বিভাগ অন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনী বাতিল করে ইতিহাসের দায় মুক্তি পেয়েছে বিচার বিভাগ।'
গণমাধ্যম ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে এজলাসের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না দিতে আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। আদালতের ভেতরে সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ পেয়ে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হলে আদালত অমাননার দিকটিও সর্তক করেন প্রধান বিচারপতি।