দেশে এখন

রাজধানীতে হরহামেশা হচ্ছে ছিনতাই, গ্রেপ্তার হলেও বেরিয়ে আসে অপরাধীরা!

কতশত পদক্ষেপ, অভিযানে কত মানুষ গ্রেফতার। তবুও কেন রাজধানীর ছিনতাই থামানো যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েও কিভাবে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসে অপরাধীরা?

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রুহুল আমিন। মাসখানেক আগে অফিসে যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। জোরপূর্বক মোবাইল, মানিব্যাগ কেড়ে নেয়ার সময় বাধা দিলে আক্রমণের শিকার হন তিনি।

সেই বিভীষিকাময় ঘটনার বিষয়ে রুহুল আমিন বলেন, ‘হঠাৎ করে আমাকে ৪ থেকে ৫ জন আমাকে আটকে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। তখন আমার হাত জখম হয়। সে অবস্থায় কিছু সংখ্যক লোক আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়।’

ঢাকায় হরহামেশা যে অপরাধগুলো ঘটে থাকে তার অন্যতম হলো ছিনতাই। ছিনতাইয়ের সম্মুখীন হওয়ার পর অনেকসময় ঝামেলা এড়াতে মামলা করতে চান না ভুক্তভোগীরা।

এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমাকে দুইজন মিলে ধরার পর মোবাইল, মানিব্যাগ কেড়ে নেয়। আর ছিনতাইকারী ধরলে তখন কী বা করা যায়? বাধ্য হয়ে সবকিছু দিয়ে দিতে হয়।’

কোনো কোনো সময় ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েন এসব অপরাধীরা। তখন বেরিয়ে আসে চাঞ্চ্যলকর তথ্য। এই যেমন- ডেমরা এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন নাদির ওরফে নাদিরা। সিসিটিভি ফুটেজেও তার প্রমাণ মেলে।

স্থানীয়রা বলেন, ‘রাত ১০টা বাজলেই রাস্তায় বের হতে ভয় লাগে। আর হঠাৎ করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় মানুষের কিছুই করার থাকে না।’

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জানা যায়, এই চক্রের প্রধান নাদিরের বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক, অস্ত্র মামলার পাশাপাশি খুনের মামলাও রয়েছে। গত ১০ বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিভিন্ন মামলায় যতবার গ্রেফতার হয়েছে ততবারই জামিনে বের হয়েছে। আর বের হয়েই একই অপরাধে জড়িয়েছে।

ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে বেশি ভাসমান মানুষ জড়িত। একমাস যদি যাত্রাবাড়ীতে থাকে তো পরের মাসে অন্য জায়গায় অবস্থান করে। তাদের স্থায়ী ঠিকানা যাচাই করা যায় না। তাদেরকে এনআইডির আওতায় আনা হয় না। পাশাপাশি তাদের বাসার ঠিকানাও যাচাই করা যায় না। আবার দীর্ঘসময় পলাতক থাকে। সবকিছু মিলিয়ে দেরি হয়ে যায়।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাসমিয়া নুহাইয়া আহমেদ বলেন, ‘ডাকাতি হওয়ার জন্য কিছু এলিমেন্টেস লাগে। ছিনতাই হওয়ার জন্যও কিছু এলিমেন্টস স্যাটিসফাই করতে হবে। আসলে যিনি ভিক্টিম তিনি তো তার মতো করে বলেন। কিন্তু সেই ঘটনাকে আইনের সঙ্গে মিলিয়ে যেভাবে আনা প্রয়োজন হয়তো সেখানে কোনো ঘাটতি থেকে যায়।’

ছিনতাইয়ের সময় প্রায়ই খুনের ঘটনাও ঘটছে। ফলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে প্রচলিত আইনের ধারা সংশোধন করা প্রয়োজন মনে করেন সমাজ ও অপরাধ বিজ্ঞানীরা।

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, চুরি-ছিনতাইকে এখন আর ছোট অপরাধ হিসেবে ভাবার সুযোগ নেই। ডাকাতি বা ছিনতাই করতে গিয়ে কাউকে হত্যাও করছে। সবকিছু মিলিয়ে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। সেই চক্রকে সহযোগিতা করার জন্য আরও অনেক ব্যক্তি কিন্তু রয়েছে।’

প্রচলিত আইনের ফাঁকফোকর বন্ধের পাশাপাশি ছিনতাই রুখতে নাগরিকদের সম্মিলিত প্রতিরোধ প্রয়োজন এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর