রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আজ (শুক্রবার, ৩ মে) সকাল পৌনে ১১টায় জয়দেবপুর স্টেশনের আউটার সিগনালে থেমে থাকা তেলবাহী ট্রেনকে ধাক্কা দেয় টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন। তেল বোঝাই ট্রেনটি কমলাপুর থেকে রওনা দিয়ে রংপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিল। আর টাঙ্গাইল থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসছিল টাঙ্গাইল কমিউটার।
ত্রুটিপূর্ণ সিগনাল, দায়িত্বে অবহেলা ও চালকের ভুলের কারণে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি স্টেশনের আউটারে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনকে সরাসরি ধাক্কা দেয়। এতে কমিউটার ট্রেনের ৫টি ও মালবাহী ট্রেনের ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটির কোনো শিডিউল ছিল না। এটি টাঙ্গাইল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে যাচ্ছিল। আগামীকাল (শনিবার) যাত্রী নিয়ে টাঙ্গাইল ফেরার কথা ছিল ট্রেনটির। শিডিউল না থাকা কমিউটারে কোনো কোনো যাত্রী ছিল না। আর তাই হতাহতের সংখ্যা ভয়াবহ হয়ে ওঠেনি।
পুলিশের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, জয়বেদপুরের দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪ জন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন কেবল কমিউটার ট্রেনটির চালক। আহতদের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডা. মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘ভর্তি তিনজন রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। কিছু পরীক্ষা দেয়া হয়েছে রিপোর্ট আসলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’
দুর্ঘটনায় ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সব ধরনের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনী। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দ্রুত ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী ট্রেন পাঠানো হয়েছে।
রেল ওয়াগন থেকে ক্রমাগত তেল পড়ায় ঘটনাস্থল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেজন্য ওই এলাকা থেকে উৎসুক জনতা সরিয়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন বলেন, ‘টাঙ্গাইলের ট্রেনে যাত্রী না থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা গেছে। যদি ওই ট্রেনে আজ যাত্রী থাকতো কতজন হতাহত হতো না চিন্তার বাইরে।’
দুর্ঘটনায় ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সব ধরনের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনী। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দ্রুত ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী ট্রেন পাঠানো হয়েছে।
রেল ওয়াগন থেকে ক্রমাগত তেল পড়ায় ঘটনাস্থল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেজন্য ওই এলাকা থেকে উৎসুক জনতা সরিয়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন বলেন, ‘টাঙ্গাইলের ট্রেনে যাত্রী না থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা গেছে। যদি ওই ট্রেনে আজ যাত্রী থাকতো কতজন হতাহত হতো না চিন্তার বাইরে।’
লাইনম্যানের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করে আরেকজন বলেন, ‘কত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল। লাইনম্যান না থাকার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কমিউটার ট্রেনের চালকই কীভাবে তার দায় এড়াবেন? একটু অসতর্কতা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা আজ আবারও প্রমাণ হলো।’
এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলওয়ের পক্ষ থেকেও ৫ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, 'যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বের করা হবে। যদি দায়িত্বরত কারও গাফলতি থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন আপ গুন্টি স্টেশন মাস্টার মো. হাসেম, পয়েন্টসম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।
গত বছর ৩ জুন ভারতের ওড়িশায় তিন ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষে ২৬১ জন নিহত হন। অন্তত ৯০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশটিতে স্মরণকালের অন্যতম বড় এই দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়, ভুল সিগন্যালের কারণে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ ধরনের ভুল সিগনাল, চালকদের অদক্ষতা কিংবা মানুষের অসচেনতায় ঘটা দুর্ঘটনা বাংলাদেশেও কম নয়। তবুও কী এই খাতে দুর্ঘটনা কমছে!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেল দুর্ঘটনা এ দেশে নতুন ঘটনা নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, দায়িত্বে অবহেলা ও খামখেয়ালিপনার কারণে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে রেল সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক হতে হবে। বাড়াতে হবে দায়িত্বজ্ঞান। পাশাপাশি সচেতন হতে হবে সাধারণ যাত্রীদেরও।