সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে এখন কত কত মেকআপ টিউটোরিয়াল কিংবা বিউটি এক্সপার্ট। যে মেকআপের প্রথম যুগটি ছিলো মিশরের প্রথম রাজবংশ থেকে আসা। তবে সময়ের পরিক্রমায় কিছুটা সময়ের জন্য নিজেকে চাকচিক্যময়ভাবে তুলে ধরা ছাড়াও মানুষ এখন যত্নবান হয়েছে নিজের প্রতি।
বিভিন্ন বিউটি পার্লারে গিয়ে রূপ-লাবণ্যে নিজেকে পরিপূর্ণ করতে ফেসিয়াল থেকে শুরু করে পেডিকিওর-মেনিকিওরের দায়িত্ব তুলে দেন এক্সপার্টদের কাছে। আর সেই ফেসিয়াল, হেয়ার স্পা, বডি ম্যাসাজেও থাকে বিভিন্ন মূল্যে বিভিন্ন ধরন। ঠিক একইরকমভাবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীদের কাছে বদলেছে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা।
পার্লারে আসা এক নারী বলেন, আমার মনে হয় নিজেকে ভালো রাখা এবং আত্মবিশ্বাসী রাখার জন্য বিউটি এক্সপার্টদের কাছে আসা উচিত।
তবে ছত্রাকের মতো এখন নামিদামি থেকে শুরু করে এলাকায় এলাকায় অভ্যন্তরীণ পার্লার থাকলেও যাত্রা শুরুতে ছিলো হাতে গোনা দু-একটি। ষাটের দশকে এ দেশে আসা চীনা নাগরিক কার্মেল চ্যাং লিউ শেই এর হাত ধরেই এদেশে ঢাকায় প্রথম শুরু হয় একটি বিউটি পার্লার। কিন্তু শুরুতে এর কোনো নাম না থাকলেও ১৯৬৫ সালে এটি মে ফেয়ার নামে আবার চালু হয়। তার পরপরই হংকং বিউটি পার্লারও ছিল ঢাকায়। আরও পরে লি বিউটি পার্লার চালু হয়। সে সময়ে অভিনেত্রী এবং অভিজাত পরিবারের নারীরাই রূপচর্চা সাজসজ্জার সেবা গ্রহণ করতেন।
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে প্রথম বিউটি পার্লার চালু হয় লুসি নামে। এরপর স্বাধীনতা পরবর্তী ভূমিতে সত্তরের দশকে প্রথম বাঙালি দুই বোন মিলে লিভিং ডল নামে পার্লার খোলেন। এরপর এক বোন সেই লিভিং ডল থেকে বেরিয়ে নিজ উদ্যোগে ১৯৭৯ সালে ঢাকার শান্তিনগরে খোলেন 'গীতিস' নামের একটি পার্লার।
তারও ঠিক দশ বছর পর ১৯৮৯ সালে নগরে আসে 'পার্সোনা'। যা রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে নারীদের কাছে এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর নব্বইয়ের দশকে এসে যুক্ত হয় নগর সংস্কৃতির নতুন ধারা। বিউটি পার্লারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে এর সেবা নেয়া গ্রাহকদের তালিকাও।
সৌন্দর্য, সাজসজ্জার মধ্য দিয়ে নিজেকে শুধু নারীরাই প্রমাণ করতে পারে সেই ধারণা থেকে এখন অনেকটাই দূরে পুরুষরা। এলাকার সেলুন থেকে এখন নগরীর বড় বড় সব জেন্টসদের পার্লার বা স্পা সেন্টারে তাদেরও পদচারণা বেড়েছে অনেক গুণ। হেয়ার কাটিং থেকে শুরু করে হেয়ার কালার ফেসিয়াল, বডি মাসাজ, স্থায়ী ট্যাটু এবং সারা শরীরে নানা রকম পেইন্টিং কোনোটাতেই যেন পিছিয়ে নেই তারাও।
তারা বলেন, সকলেরই নিজেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। এ সচেতনতা সকলের জন্যই জরুরি। মেয়েদের মতো রুপচর্চা আমাদের করা হয় না।
পোশাকের পাশাপাশি সাজসজ্জার বিষয়টি যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে কারণ এর মধ্যে দিয়ে মানুষের ব্যক্তিত্ব, রুচি, ভালোলাগা, সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। সুন্দর করে উপস্থাপনে যে তৃপ্তি এবং পরিপূর্ণতা, তা ব্যক্তিকে করে আত্মবিশ্বাসী। তবে তা হতে হবে অবশ্যই পরিমার্জিত।