হাওরের বিস্তৃত জলাভূমিতে এখন সবুজের সমারোহ। ফসলের ভরে উঠেছে হাওরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। তবে এই ফসল রক্ষায় কতটুকুই প্রস্তুত হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
একটি মাত্র ফসল রক্ষায় প্রতিবছর কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় বাঁধ। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও বাঁধের উপর ঝুলে আছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল।
গত বছর হাওরে ২০৬টি পিআইসির মাধ্যমে ৩৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার বাঁধের কাজ হয়। তবে এবার ২৮টি পিআইসি কম হওয়ায় খরচ কমেছে ৪ কোটি টাকার বেশি। চলতি মৌসুমে হাওরের ১৫৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ও সংস্কারের গঠন হয়েছে ১৮০টি পিআইসি। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
খালিয়াজুরী উপজেলায় ১১০টি, মদনের ২৫টি, মোহনগঞ্জে ২৬টি, কলমাকান্দায় ৭টি, বারহাট্টার ৯টি, পূর্বধলায় দুটি ও আটপাড়ায় একটি প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
কোটি টাকার বাঁধ নির্মাণের নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। কাগজপত্রে অগ্রগতি থাকলেও বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। জেলার অধিকাংশ বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। ধনু নদীর পাড়ে খালিয়াজুরীর জগন্নাথপুর হাওর থেকে রসুলপুর পর্যন্ত কেবল শুরু হয়েছে মাটি ফেলার কাজ। যদিও সময় শেষ হওয়ার ব্যাপারে কোন কিছুই জানা নেই তাদের।
শ্রমিকরা বলেন, 'আমরা জানি না যে ২৮ তারিখ পর্যন্ত। নির্মাণ পুরোপুরি হয় নাই। পানি আইলে বাঁধ থাকবো না। আমাদের কাজ চালাইয়া যাইতে বলছে।'
একই অবস্থা জেলার বেশিরভাগ পিআইসির কাজে। অভিযোগ আছে, কাবিটা প্রকল্পে নারী-পুরুষ শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কথা থাকলেও প্রকল্প কমিটির সভাপতিরা কাজ দিয়েছেন ঠিকাদারদের। আর টাকা বাঁচাতে ঠিকাদাররা একই শ্রমিক দিয়ে করাচ্ছেন একাধিক বাঁধের কাজ।
এতেই সমস্যা বেড়েছে বলে স্বীকার করলেন ভেকু মালিক শহিদুল ইসলাম। বলেন, 'আমাদের যেভাবে বলছে সেভাবেই করছি। আমরা কাজ করতেছি, যদি সময় কম থাকে তাইলে তো আর কিছু করার নাই।'
তবে কাজের ধীরগতি নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে কৃষকদের। হাওরের একমাত্র ফসল বোরো আবাদ সারা বছরের খোরাক মেটায় কৃষকদের। চলতি বছর হাওরের ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ফসলের আবাদ হচ্ছে। এ ফসলের আনুমানিক বাজার মূল্য ৭০০ কোটি টাকা।
কৃষকরা বলেন, 'আমাদের বছরের সম্পূর্ণ খরচ এ ফসলের উপরে। এখানে ক্ষতি হইলে সবই শেষ। এই বাঁধের কাজ শেষ করতে আরও ১৫ দিন লাগবো। অন্যসময় বেড়িবাঁধে ঘাস হইয়া যায়। আর এ বছর বাঁধ বান্ধা শেষ হয় নাই।'
জেলা মনিটরিং কমিটির সদস্যরা বলেছেন, প্রতিবছরই প্রভাবশালীরা বাগিয়ে নিচ্ছেন বাঁধের কাজ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু ও শেষ হয় না। এছাড়াও প্রয়োজন ছাড়া হাওরে যত্রতত্র বাঁধ নির্মাণে পানি প্রবাহে যেমন বাধার সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি জীববৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, হাওরে কিছু নিচু এলাকার পানি নামতে কিছুটা দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে পানি আসার আগেই সবক'টি বাঁধের কাজ শেষ হবে বলে জানান পাউবো'র নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান। বলেন, 'বাঁধ নির্মাণের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশের মতো। এ বছর নির্বাচনের আমেজ ও অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে কাজ শেষ হতে সময় লাগছে। আশা করছি আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।'
জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে প্রায় ৩৬৫ কিলোমিটার অস্থায়ী বাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১৮০টি পিআইসির আওতায় ১৫৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ চলছে। এর ৯২ কিলোমিটারই রয়েছে খালিয়াজুরীতে।