শারীরিক নানান অক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন ভৈরবের সিফাত হোসেন। কিন্তু কখনও কারো ওপর নির্ভরশীল থাকতে চাননি। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক শেষ করেছেন। নিজেকে দক্ষ করে তুলেছেন জাভা স্ক্রিপ্ট, এসইও, পাইথন, গ্রাফিক্স ডিজাইন ও সাইবার সিকিউরিটির মতো জটিল বিষয়ে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি মেলায় এসেছেন তিনি। জীবনবৃত্তান্ত দেশের আইটিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জমা দেন।
সিফাত বলেন, ‘যেহেতু স্নাতক শেষ করেছি আর এখন পরিবারে বেকার বসে আছি। সাইবার বা ডেভেলপমেন্টের কাজ পারি। একটা কাজ পেলে আমি মনে করি সফল হব।’
দেশে সিফাতের মতো শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি। তাদের অনেকেই এই গণ্ডি পেরিয়ে নিজের উপার্জনে বাঁচতে চান। প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে টিকে থাকতে চান । সেক্ষেত্রে এই আয়োজন বড় সুযোগ বলে মনে করেন চাকরি প্রত্যাশীরা।
তাদের একজন বলেন, ‘আমার যেহেতু পায়ে সমস্যা তাই তারা বলছেন, তুমি মার্কেটিংয়ের কাজ করতে পারবে না। কল সেন্টার বা বসে করার মতো কাজ করতে বলেছেন।’
অপর আরেকজন বলেন, ‘প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ে আমাদের যে পরিমাণ কোটা খালি থাকে; সেগুলো যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়।’
চাকরি মেলায় নিজের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিচ্ছেন প্রতিবন্ধী সিফাত
প্রতিবন্ধীদের চাকরির ব্যবস্থা করতে এগিয়ে এসেছে আইটি খাতের ৪৮ প্রতিষ্ঠান। কল সেন্টার, ওয়েব ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যানিমেশন ও প্রোগ্রামিংসহ কয়েকটি পদে লোকবল নিয়োগ দিচ্ছে। এবারের মেলায় নিয়োগ দেয়া হবে অন্তত ৫০ জন প্রতিবন্ধীকে।
প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘আমাদের অফিসে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা একটা কোটা রাখা হয়। প্রতিটি বিভাগে ২ থেকে ৩ জন প্রতিবন্ধী থাকে। অনেকগুলো ভালো সিভি পেয়েছি যারা বিভিন্ন কাজে পারদর্শী। যদি মেধাকে কাজে লাগাতে পারে তাহলে শারীরিকভাবে তারা কতটুকু সবল সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়।’
২০১৫ সাল থেকে প্রতিবন্ধীদের চাকরির মেলা আয়োজন করছে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। এ দায়িত্ব কেবল আইসিটি বিভাগের নয় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, সব মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেয়া হলে বছরে ৫০ হাজার প্রতিবন্ধীকে চাকরি দেয়া সম্ভব। সবার সহযোগিতা পেলে দেশের মূল অর্থনীতির স্রোতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের যুক্ত করা যাবে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘৫০টি মন্ত্রণালয়, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ'র পাশাপাশি বেসিস, ই-ক্যাপ, আইএসপিএবি এবং বিসিএসসহ সবাই মিলে যদি সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করি, তাহলে আমরা কিন্তু হাজার হাজার প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবো।’
এই মেলার মাধ্যমে গেল ১০ বছরে এক হাজার ৬০০ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চাকরি নিশ্চিত করেছে আইসিটি বিভাগ।