অথচ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নদীর বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। এতে অন্তত ২০টি নৌ রুটে লঞ্চ ও ফেরি চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
জেলার একমাত্র নৌবন্দরটিও বন্ধের পথে। এছাড়া প্রয়োজনীয় বয়া ও মার্কার বাতি না থাকায় কুয়াশা ও ভাটার সময় নৌযান চালাতে চালকদের বিপাকে পড়তে হয়।
লঞ্চ মাস্টাররা বলেন, 'বর্ষাকালে যাও লঞ্চ চলে, কিন্তু শীতে একেবারে পানি থাকে না। কারণ ড্রেজিং ঠিকমতো হয় না। পর্যাপ্ত পরিমাণ ড্রেজিং করে যদি বয়া বাতিগুলো দিয়ে দেয়া হয় তাহলে আমাদের আর সমস্যায় পড়তে হয় না।'
দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশের ২১ জেলায় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ভোলা-লক্ষীপুর নৌ রুট। যদিও শীতের শুরুতেই মেঘনার ইলিশা পয়েন্টে প্রায় ১০ কিলোমিটার ডুবোচর জেগে ওঠে। এতে নৌযান কয়েক কিলোমিটার ঘুরে চলছে।
এমন একাধিক ডুবোচর রয়েছে মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে। রোরো ফেরি চলাচলে পানির গভীরতা কমপক্ষে তিন মিটার দরকার। তবে ভাটার সময় বুড়ী, রহমত ও ক্যাপ খালে পানি থাকে এক থেকে দেড় মিটার। পাশাপাশি ফেরি সংকটে প্রতিদিনই যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে।
যাত্রীরা বলেন, 'যেখানে লাগতো দেড় ঘন্টা সেখানে আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। লঞ্চ আসতে দেরি করে তাই আমরা ভোগান্তিতে পড়তে হয়।'
এখানে ৪টি ফেরি চললেও বেশিরভাগ সময় বিকল থাকে দুটি ফেরি। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ইলিশা ও মজুচৌধুরীর ঘাটে শতশত যানবাহন আটকে আছে।
পরিবহন শ্রমিকরা বলেন, 'আগে ট্রিপ থাকতো ৫-৬টা, আর এখন ২-৩টা। ৪-৫ ঘণ্টা ফেরিতে আটকে থাকলে কাঁচামালে পচন ধরে যায়। ঠিকমতো পৌঁছাতে পারি না, পার্টি নানান কথা বলে। ভাড়াও ঠিকমতো দেয় না।'
লঞ্চ ও ফেরি কর্তৃপক্ষ বলছে, নাব্য সংকটে নিদিষ্ট সময়ে নৌযান পৌঁছাতে না পারায় বাড়ছে পরিবহন খরচ।
ভোলা বিআইডব্লিউটিসির সহ ব্যবস্থাপক মো. আল-আমিন বলেন, 'এই ডুবোচরগুলো যদি অপসারণ করা যায়, তাহলে আমাদের ১০ কিলোমিটার নৌপথ কমে যাবে এবং অল্প সময়ে ফেরি পারপার করা সম্ভব হবে।'
নৌপথ সচল রাখতে চলছে ড্রেজিং কার্যক্রম বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ'র মো. শহিদুল ইসলাম। বলেন, 'আমাদের ড্রেজিং কাজ চলমান আছে। এরপরেও যদি কোথাও সমস্যা থাকে, আমাদের কাছে চাহিদাপত্র আসলে সে অনুযায়ী দ্রুত ড্রেজিং কার্যক্রম গ্রহণ করবো।'
দ্রুত সময়ে নৌপথের ভোগান্তির অবসান হবার আশ্বাস ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামানের। তিনি বলেন, 'ভোলা-লক্ষীপুর, বরিশাল এবং ঢাকার যে নৌ পথটি রয়েছে সেটার নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ড্রেজিং কার্যক্রম আরও বেগবান করা হবে।'
ভোলার ২০টি রুটে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ছোট-বড় লঞ্চ ও ৮টি ফেরি চলাচল করে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে নদীর তলদেশে পলি জমে সৃষ্টি হচ্ছে ডুবোচর। বিআইডব্লিউটিএ কমবেশি ড্রেজিং করলেও হচ্ছে না স্থায়ী সমাধান।