দেশে এখন
0

স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নতুন প্রকল্প

ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নের অন্তরায় 'ইশারা পদ্ধতি'

প্রতীকী ভাষা, যখন চোখের দেখা কিংবা মুখের ভাষা অযাচিত তখন ভরসা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাংকেতিক চিহ্ন।

বর্তমানে মানুষ যখন পৃথিবী ছাড়িয়ে অন্য গ্রহ জয়ের চিন্তা করে তখন আমরা মোড়ে বসে ভাবি আজ সময়মতো বাড়ি ফেরা হবে তো? যেন হাতের ইশারায় চলে ঢাকা আর আমাদের অর্থনৈতির চাকা।

যাত্রীরা বলেন, রাস্তায় বের হয়ে জ্যামে আটকে পড়লে কখন গন্তব্যে যেতে পারবো তা বলা যায় না। সিগনালে থাকার কোন নির্দিষ্ট সময়ও নেই। হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে কী কাজ হয়?

মহানগরীর সাড়ে ৬০০ সড়ক সংযোগ কিংবা মোড়ে কাজ করে প্রায় ৩ হাজার ট্রাফিক পুলিশ। এর মধ্যে শুধু গুলশান-২ এ রঙিন বাতির ব্যবহার রয়েছে, বাকি সব হাতের ইশারায় চলে। সনাতন পদ্ধতিতে এই কাজ করাতে যেমন যাত্রীদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে তেমনি ট্রাফিক পুলিশের জীবন ও স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। যাত্রীদের চাওয়া একটি স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা।

গাড়ির চালকরা বলেন, ‘হঠাৎ করে গাড়ির সামনে হাত দেখিয়ে থামতে বলা হচ্ছে। এতে করে তো সমস্যা হয়, আবার পেছনের গাড়ির চালকও বুঝতে পারে না। আবার কেউ হাতের ইশারা বুঝতে পারে না, তখনই সমস্যা হয়।’

বিবিএসের তথ্য বলছে, বছরে রাজধানীতে নতুন বাসিন্দা হিসেবে ৫-৬ লাখ মানুষ যুক্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন বাড়ছে আরও ২ হাজার করে, তাতে দিনদিন সড়কে চাপ বাড়ছে। অথচ সড়কের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়নের জন্য গত ১০ বছরে ট্রাফিক বিভাগ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিলেও এখন পর্যন্ত কোনটি কার্যকর করা যায়নি।

২০০১-০২ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৭০টি ইন্টারসেকশনে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা করা হয়, যা একবছরও টেকেনি। সে বছরই সাড়ে ১৩ কোটি টাকা খরচে ৬৮টি ট্রাফিক লাইট স্থাপন করা হয়। যেগুলো কয়েক বছরের মধ্যে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

এরপর ২০১২ তে আবার ১১২ কোটি টাকা খরচে ২৯টি ইন্টারসেকশনে বসানো হয় সিগন্যাল বাতি। সবশেষ ২০১৬ তে ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে পরীক্ষামূলক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ট্রাফিক সিস্টেমও কাজে আসেনি।

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘সমন্বয়ের অভাবে আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করা যায়নি।’

বর্তমানে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী জুনের মধ্যে হাজার কোটি টাকার অত্যাধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু হবে। যেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রাফিক অমান্যকারীকে শনাক্ত করা হবে, থাকবে সেন্সরযুক্ত ক্যামেরা।

বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (ডেভেলপমেন্ট) গাজী মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ক্যামেরার সঙ্গে সফটওয়ার ব্যবহার করলে কন্ট্রোল রুম থেকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।’

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক বলেন, ‘দ্রুতগতি ও ধীরগতির গাড়ি আলাদা করতে হবে। আর প্রকল্প নয় প্রয়োজন সংস্থাগুলোর সদিচ্ছা। একইসঙ্গে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল করতে হবে।’