অর্থনীতি
দেশে এখন
0

কুয়াকাটায় জমজমাট শুঁটকি মাছের বাণিজ্য

কুয়াকাটায় চার দশকের শুঁটকি বাণিজ্য। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার জেলে পরিবার।

আলোর সাথে নীড়ে ফিরে জেলেরাও, আর হাতে উপার্জন আর আগামী। কিছু যাবে শহরে আর কিছু সৈকতেই থাকবে।

কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে দুই-চার কিলোমিটার পশ্চিমে গেলেই সৈকতে দেখা মিলবে ছোট ছোট দোকান ঘর। তার পেছনেই সারি সারি মাঁচা, যা শুঁটকি পল্লী নামে পরিচিত।

প্রায় চার দশক আগে এখানে শুরু শুঁটকির প্রক্রিয়াজাতকরণ। তবে গত দুই যুগে এটি পেয়েছে বাণিজ্যিক আকার। এ সময়ের সাক্ষী ১৮ বছর ধরে এই ব্যবসা করা মোহাম্মদ শাহজালাল।

তিনি বলেন, ‘জেলেদের কাছ থেকে আগে মাছগুলো কেনা হয়। এরপর পরিষ্কার করে কাটা হলে তাতে লবণ দেয়া হয়। এসব কিছুর পর সেই মাছ মাঁচায় দিয়ে দিই।’

শাহজালালের মতো কুয়াকাটায় এই বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ২০-২৫ হাজার জেলে পরিবার। তবে স্থায়ী পল্লী না থাকায় বছরের অর্ধেক সময় শুঁটকি উৎপাদন বন্ধ থাকে। ১ থেকে ২ সপ্তাহ শুকানো শেষে আঁটি বেঁধে সংরক্ষণ করা হয়।

আর বিকেল থেকে বেচাকেনা শুরু হয়। এখানকার দোকানগুলোতে লইট্টা, ছুড়ি, কোরাল, রূপচাঁদার মতো প্রায় ৩০ ধরনের মাছের শুঁটকি পাওয়া যায়। আর কম দামে ভালো পণ্য পেয়ে ক্রেতারাও খুশি।

ক্রেতারা বলেন, ‘এখানে অনেক ধরনের শুঁটকি মাছ পাওয়া যায়। আর ঢাকায় এসব শুঁটকির দামও বেশি, এখানে সস্তা দামে কেনা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে ভালো লাগছে যে, এখানে টাটকা শুঁটকি পাচ্ছি।’

প্রাকৃতিকভাবে শুকানোয় এসব মাছের আলাদা স্বাদ রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এখানকার বড় দোকানে দিনে বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার। সবমিলিয়ে শুধু এই শুটকি পল্লীতে মাসে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার বেচাকেনা হয়।

বিক্রেতারা বলেন, ‘বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারে বেশি বেচাকেনা হয়। অন্য দিনগুলোতে বেচাবিক্রি কম হয়।’

সমুদ্রের ঝিনুক, শামুক আর পাথরের প্রসাধনীর অনেক দোকানও এখানে রয়েছে। যা নারী পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।

আর সূর্যের শয়নে যখন রাত জেগে উঠে। সরব তখন সাগরপাড়ের রন্ধনশিল্পীরা। সৈকতের অদূরেই বসে মাছের বাজার। যেখানে সাজানো থাকে টুনা, কোরাল, পোয়া, চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়া ও অক্টোপাসের মতো সামুদ্রিক প্রাণী।

মাছের ক্রেতারা বলেন, ‘এখানে দাম বেশি হলেও তাজা মাছ কেনা যাচ্ছে। আর একটু দর কষাকষি করলে সাধ্যের মধ্যে পছন্দের মাছ কেনাও যায়।’

এখানে সবচেয়ে কম দামে কাঁকড়া আর বেশি দামে রুপচাঁদা পাওয়া যায়। তবে দাম কম হওয়ায় টুনা মাছের বেশি চাহিদা রয়েছে। স্বাভাবিক দিনে ৩০-৪০ হাজার টাকা বিক্রি হলেও উৎসবে লাখ টাকার কাছাকাছি হয়।

ভোজনরসিকরা বলেন, ‘মাছ যে এতো স্বাদের হয় এখানে আসার পর বুঝেছি। আর এখানকার খাবারের মানও খুব ভালো।’

খাবারের স্বাদ হোক কিংবা প্রকৃতির টান, ভ্রমণপিপাসুদের ভীড় বাড়ুক কুয়াকাটায়।