লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালকের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে এসব যানবাহনে প্রতিদিন চলাচল করছেন কযেক হাজার যাত্রী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব যানবাহন রাজধানীর পুরো পরিবহন ব্যবস্থার জন্যই ঝুঁকি।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর সাইনবোর্ড থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তায় সহযোগী ছাড়াই যাত্রী নিয়ে ফিটনেসবিহীন লেগুনা চালাচ্ছে ১৬ বছর বয়সী সাকিব।
দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কমপক্ষে ২১ বছর বয়স থাকা আবশ্যক। সেখানে মহাসড়কে কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় কিভাবে লেগুনা চালাচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্করা? শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কই নয়, রাজধানীর প্রধান-প্রধান সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় অসংখ্য লেগুনা।
অপ্রাপ্তবয়স্ক লেগুনা চালকরা বলে, ‘আমাদের কাজ করে খেতে হয় তাই লেগুনা চালাই। আমাদের এই রোজগারে পুরো পরিবার চলে।’
রাজধানীতে প্রতিদিন এসব লেগুনায় যাতায়াত করেন হাজার হাজার যাত্রী। যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী ও নারী। অপেশাদার ও অদক্ষ এসব চালকের বাহনে ঝুঁকি নিয়ে কেন চড়ছেন তারা?
যাত্রীরা বলেন, ‘রিকশায় গেলে যেখানে ৮০ থেকে ১০০ টাকা লাগে, সেখানে লেগুনায় ২০ টাকায় চলাচল করা যায়। এছাড়া বাসে গেলে সিট পাওয়া যায় না, কিন্তু লেগুনায় বসে যাওয়া যায়। তবে নিজেদের জন্য ভয় হয় মাঝে মাঝেই, কারণ এসব লেগুনার ফিটনেস ভালো থাকে না।’
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার মূল সড়কে বসানো হয়েছে একটি লেগুনাস্ট্যান্ড। রাজধানীবাসির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই, সেইসঙ্গে দেশের প্রধান দুটি মহাসড়ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেস ওয়ে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এসে এই পয়েন্টে যুক্ত হয়েছে ঢাকার সঙ্গে। শুধু যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায়ই নয় রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তৈরি হওয়া যানজটের অন্যতম কারণ এমন অসংখ্য লেগুনাস্ট্যান্ড।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, মালিকদের নিজেদের সুবিধা মতো তৈরি করা রুটের সংখ্যা ১৫ থেকে ১৮টি। এসব রুটে লেগুনা চলাচল করে দেড় হাজারেরও বেশি। যার বেশিরভাগেরই ফিটনেস নেই। সেই সঙ্গে ভাড়া থেকে শুরু করে স্ট্যান্ড নির্ধারণ- সবকিছুই চলে লেগুনামালিকেদের ইচ্ছায়।
গবেষণায় দেখা যায়, এসব লেগুনা চালক-সহযোগীদের অনেকেই মাদকাসক্ত। এছাড়া লাইসেন্স না থাকায় এদের কোনো দায়বোধও তৈরি হয় না। সব মিলিয়ে অনিরাপদ যান দাপিয়ে বেড়ায় সড়কে। বিষয়টি যাদের দেখভাল করার কথা, অভিযোগ রয়েছে মাসোয়ারা পেলে সব অনিয়মই বৈধতা পায় রাস্তায়।
দীর্ঘদিন সড়ক যোগাযোগ নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামানের মতে, অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক ও ফিটনেসবিহীন লেগুনা সড়কের অন্যান্য বাহনের জন্যেও ঝুঁকিপূর্ণ। দেখা যায়, চালক ও হেলপার দু’জনেই অপ্রাপ্তবয়স্ক আর এদের সড়কে নামার জন্য দায়ী চাঁদাবাজি। এই চাঁদাবাজিতে প্রশাসনের লোকজন ও মালিকরা রয়েছেন।
বিআরটিএ বলছে- সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিতের মূল দায়িত্ব পুলিশের। তারপরও ফিটনেসবিহীন বাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানোর দাবি তাদের।
বিআরটিএ’র পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব ই রব্বানী বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।’
ডিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) কে এন রায় নিয়তি বলেন, ‘এসব লেগুনার চালক যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই তাদের নিয়মিত সড়ক আইনে মামলা করা হচ্ছে। এছাড়া যদি কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ১৭টি নির্দেশনা দেয়া হয়। এর কিছুদিন পর রাজধানীতে লেগুনা চলাচল নিষিদ্ধ করে পুলিশ। সেসময় বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকলেও ফের অবাধে চলাচল করতে শুরু করে অবৈধ এসব যানবাহন।