দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কান্তজিউর মন্দিরে চলছে রাস উৎসব ও মেলা। আড়াইশ বছরেরও বেশি সময় ধরে টেরাকোটার এক অপূর্ব নিদর্শন বহন করে চলেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ও করোনার সময় দুই বছর বন্ধ ছিল। এছাড়া একবারও বন্ধ হয়নি মেলা।
এই মন্দির ও দিনাজপুর রাজবাড়ি পরিচালনা করে রাজদেবোত্তর এস্টেট। দিনাজপুর রাজদেবোত্তর এস্টেটের সদস্য উত্তম কুমার রায় বলেন, 'শতশত বছরের পুরনো নিয়ম-নীতি এখনো ধরে রাখা হয়েছে। এই রাসমেলায় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা আসে।'
ধর্মীয় আচার পালনের পাশাপাশি মন্দির চত্ত্বরে প্রতিবছরই বসে গ্রামীণ মেলা। দিনের আলো নিভে গেলেই রং বেরংয়ের আলোয় ঝলমল করে পুরো মেলা প্রাঙ্গন। ঝলমলে আলোর মাঝে চোখ আটকে যায় খানিকটা অন্ধকারে বসে থাকা মানিকের ছোট্ট ছাউনিতে। বিভিন্ন ধরণের খোল নিয়ে নিজ ছাউনিতে বসে ক্রেতা টানার চেষ্টা করেন মাঝবয়সী মানিক। একেকটি খোলের দাম ১৬শ থেকে দুই হাজার টাকায়।
ঢোল বিক্রেতা মানিক জানান, বিভিন্ন দামের বাদ্য রয়েছে। প্রকারভেদে মূল্য ভিন্ন। ১২০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যেই বিক্রি করছি।
এক মাস চলা এই মেলায় একদিন চলে বউমেলা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সী নারীরা আসেন তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে। বিশেষ করে পূজার সামগ্রী, শাখা, চন্দন ও সারা বছরের সিঁদুর কেনেন এখান থেকেই।
নারী ক্রেতারা বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এটা অনেক বড় তীর্থস্থান। প্রতিবারই আসা হয়। তুলসীর মালা, সিঁদুর, পূজার ঘটসহ কিছু অনুষঙ্গ কিনলাম।
মেলা মানেই হরেক রকম খাবারের সমারোহ। গরম তেলে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে তৈরি করা জিলাপি কিনতে ও খেতে ভিড় করেন অনেকেই।
প্রতিদিন লাখখানেক দর্শনার্থীর ভিড় হয় মেলায়। ছুটির দিনে এই সংখ্যা দাঁড়ায় তিন থেকে চার লাখে। সন্ধ্যার পর আকর্ষণীয় ঢংয়ে মাইকে আহ্বান আসতে থাকে সার্কাস, যাত্রাপালা দেখার।
স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে হাজার খানেক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে এবারের মেলায়। মেলা ঘিরে সারা বছরের প্রস্তুতি থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীদের।
বিক্রেতারা বলেন, ধ্রুপদী, ঘট, মূর্তিসহ পূজার যাবতীয় সকল জিনিসই এখানে পাওয়া যায়।