পুলিশের পোশাক বদলেছে, আচরণ-কার্যক্রমে পরিবর্তন কতটা?

নতুন পোশাকে ডিউটি করছেন  ট্রাফিক পুলিশের সদস্য
নতুন পোশাকে ডিউটি করছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য | ছবি: এখন টিভি
0

পুলিশের পোশাকের রঙ বদলেছে। আস্থার রঙ কি বদলাবে? দায়িত্ব আরও সুদৃঢ় হবে কি-না সেটিও সময়সাপেক্ষ। অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, পোশাকি পরিবর্তনের সাথে পুলিশের কার্যক্রম আর আচরণে পরিবর্তন হলেই তাদের প্রতি আস্থা বাড়বে জনগণের। অন্যদিকে, সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে নতুন পোশাককে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জন নিরাপত্তা নিশ্চিতে জনগণের বন্ধুখ্যাত পুলিশকে হরহামেশাই মুখোমুখি অবস্থানে দেখা যায়। যার সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক উদাহরণ দেখা গিয়েছিল ২৪-এর জুলাই আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে সে সময় মরিয়া হয়ে উঠেছিল তারা। হাজারো প্রাণের অকাল পরিণতি ঘটে পুলিশের গুলিতে। জন্ম দেয় নানা সমালোচনার।

অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে পুলিশের অতীত কর্মকাণ্ড আর কালিমা ঘোচাতে অবধারিত হয়ে ওঠে সংস্কার। এমন বাস্তবতায় বাহিনীর কার্যক্রমে পরিবর্তন আনতে বিভিন্ন সুপারিশ দেয় কমিশন। তবে সবাইকে অবাক করে পুলিশের পোশাক পরিবর্তনই যেন মুখ্য হয়ে ওঠে। যা কিনা কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশই করা হয়নি।

গেল ১৫ নভেম্বর থেকে লৌহ রংয়ের নতুন পোশাকে দায়িত্বে নেমেছে পুলিশ। আর এরপরই শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। মিশ্র মন্তব্যে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও। প্রশংসার পাশাপাশি তির্যক মন্তব্য করতেও পিছপা হননি কেউ কেউ।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের ব্যবহৃত অন্যান্য উপকরণের সাথে সামঞ্জস্যে ঘাটতি আছে নতুন পোশাকের। তবে শুধু পোশাকে নতুনত্ব নয়, পুরনো সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে গণমানুষের আস্থা অর্জনে কাজ করার পরামর্শ তাদের।

আরও পড়ুন:

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘অপরাধীদের জন্য যে রং এর পোশাক পড়লে তারা সতর্ক থাকে, যে রংয়ের পোশাক পরিধান করলে জনগণের মধ্যে একটা সাহস সঞ্চার হয় যে পুলিশ আছেন বা এত দূরে বা কাছে আছেন। পুলিশকে আইডেন্টিফাই করা যায় এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে রংটা নির্ধারণ করা হয় নি। এটা খুব স্পষ্ট। কর্মকাণ্ড যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে হাজার রংয়ের পোশাক পড়িয়েও কোনো লাভ হবে না৷ আমরা তার কাজের পরিবর্তনটা দেখতে চাই।’

সাধারণত দেশ অনুযায়ী আবহাওয়ার ভিত্তিতে পোশাক নির্বাচন করা হয় সেবা সংস্থাগুলোর। পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাদের মতে, সরকারের দৃশ্যমান অংশ হিসেবে পুলিশের পোশাক বাছাইয়ের চেয়ে সেবার মান বাড়াতে বেশি মনোযোগ প্রয়োজন। পাশাপাশি পুলিশের পরিবহন ব্যবস্থা, থানার অবকাঠামো উন্নয়নসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়াতে অগ্রাধিকার দেয়ার তাগিদ তাদের।

সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ড. এম আকবর আলী বলেন, ‘পুলিশ একটা নিউট্রাল বডির আন্ডারে পরিচালিত হোক। একটা নিউট্রাল ছাতার নিচে পুলিশ পরিচালিত হোক এটা আমরা চাচ্ছিলাম। একটা স্বাধীন পুলিশ কমিশন আমরা চাচ্ছিলাম। পোশাক যেটাই হোক কালো, সাদা এটা বিষয় না। পুলিশের অনেক মালামাল লুট হয়ে গেছে, অনেক থানা লুট হয়ে গেছে, অস্ত্র লুট হয়ে গেছে। সেগুলোর রিপ্লেসমেন্ট আগে দরকার। কাজেই সেটা না করে শুধু পোশাকের দিকে নজর দিলে তো হবে না।’

ডিএমপির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ২৫ শতাংশ সদস্যকে নতুন পোশাক দেয়া হয়েছে। তবে পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক বলছেন, পুলিশ কর্মকর্তারা।

ডিএমপির উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘পছন্দ অপছন্দ একেবারেই আপেক্ষিক। আমার কাছে যেটা পছন্দ সেটা আপনার পছন্দ না ও হতে পারে। আবার আপনার পছন্দ আমার কাছে পছন্দ না ও হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করছে আমার পেশাদারিত্ব বা কাজের কোনো পরিবর্তন আসছে কী না। আমরা সেই ইতিবাচক জায়গাটাতে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’

পোশাকি সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে, সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে দেশ ও জনগণের সান্নিধ্যে থাকবে পুলিশ বাহিনী, এমন প্রত্যাশাই সবার।

ইএ