জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা

0

কার্বন নিঃসরণ তালিকার তলানিতে থেকেও বৈশ্বিক উষ্ণতার বলি হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। বিশেষ করে, শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পুরো বিশ্বের মতো অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ আর দূষণে অতিষ্ঠ নগরবাসী।

নতুন যে শিশু এসেছে এই ধরায়, তার জন্য কতোটা উপযোগী এই পরিবেশ? এক টুকরো সবুজ, বিশুদ্ধ বাতাস, স্বচ্ছ পানির চাহিদা মেটানোর যোগানই বা কতটুকু শিশুদের জন্য? দ্রুত নগরায়ন, সবুজায়ন ধ্বংস আর বৈশ্বিক উষ্ণতায় প্রতিনিয়ত নিম্নগামী হচ্ছে ঢাকার বায়ুমান।

|undefined

ঢাকার পরিবেশে শুষ্ক মৌসুম চলছে। সে কারণে বেড়েছে বাতাসে ধুলিকণার পরিমাণ বলে জানান নগরবাসীরা। তারা বলেন, ‘রাস্তায় চলাফেরায় শ্বাস নেয়াই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে। বাতাসের সঙ্গে ধুলাবালি আমাদের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এর কারণে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। আক্রান্ত হচ্ছে নানা রকম অসুখে।’

সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য সমস্যা শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু সংবেদনশীল স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে হাজারো শিশুকে। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে প্রান্তিক, সব শ্রেণির শিশু এই দূষণের নীরব ভুক্তভোগী।

|undefined

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের একটি গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে চরম আবহাওয়ার ঘটনা বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। ২০২১ সালের গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বাড়ে ০.৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যার ফলে ১২টি তাপপ্রবাহ এবং উচ্চ তাপজনিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে শিশুরা।

|undefined

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, দূষণজনিত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে বিভিন্ন বয়সী শিশু। অভিভাবকরা জানান, অতিরিক্ত গরম, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্তান্ত হচ্ছে।

জীবাশ্ম জ্বালানির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বায়ুদূষণ এবং তাপমাত্রা। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বহুমুখী ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চরম আবহাওয়ার কারণে শিশু-কিশোরদের মধ্যেও জলবায়ু সংবেদনশীল রোগের প্রকোপ বাড়ছে। তাই স্বল্প কার্বন নিঃসরণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে জলবায়ু নীতিমালা কার্যকর করে আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি জানান পরিবেশবিদ ও চিকিৎসকরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান কামরুল এখন টিভিকে বলেন, ‘ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বদলে যাচ্ছে পরিবেশ। এতে বায়ুমণ্ডলে বাড়ছে ধূলিকণার পরিমাণ। যার ক্ষতিকর প্রভাবে শিশুরা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে দিন দিন হাসপাতালে চাপ বাড়ছে শিশু রোগীর।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষণ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অতিরিক্ত উষ্ণতা ও তাপমাত্রায় কলেরা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর মতো রোগগুলো মহামারির আকার নিতে পারে। যার নীরব ভুক্তভোগী হতে পারে নানা বয়সী শিশু।

|undefined

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ু সচেতন স্বাস্থ্যনীতির সাথে পরিবেশনীতির সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি শিশুদের মতো নাজুক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে নজর দিতে হবে।’

এবিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, স্থানীয় ও বৈশ্যিক কারণে ঢাকার ইকোসিস্টেম থেকে শুরু করে বৃক্ষের বংশ বিস্তার বৃদ্ধি, মানুষ ও প্রাণিদের তাপমাত্রা অভিযোজন সবকিছু মিলে একটা বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার মানুষ সেই বিপর্যয়ের মাঝে আছে। যা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তের কারণে। পাশাপাশি এর কারণে শুধু শিশুস্বাস্থ্য নয়, খাদ্য-পুষ্টি এবং জীবিকায় পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব।

স্থানীয় উৎস থেকে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণ কমাতে কঠোর পদক্ষেপ, জলবায়ু সচেতন স্বাস্থ্যনীতি কার্যকরের মাধ্যদিয়ে জলবায়ু সহনশীল প্রজন্ম গড়ে উঠবে। এমন আশাবাদ বিশেষজ্ঞদের।

আরও পড়ুন: