ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে উত্তপ্ত ভূ-রাজনীতি। সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খাল দখলের পাশাপাশি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যদিও নানামুখী সমালোচনার পরেও নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেননি তিনি।
ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ৪ বছর পর বুধবার প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন রিপাবলিকান এই নেতা। এসময় জানান, গ্রিনল্যান্ডের বাসিন্দাদের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র। একীভূত করার প্রস্তাবে মিলেছে সাড়া। পাশাপাশি পানামা খালকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার বিষয়ে যুক্তিও তুলে ধরেন তিনি।
মার্কিন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এই খাল তৈরি করতে গিয়ে ৩৮ হাজার মার্কিনকে হারিয়েছি। তাদের ১ ডলারের বিনিময়ে খাল পরিচালনা করতে দিয়েছি। উল্টো তারা আমাদের জাহাজ থেকে অর্থ নিচ্ছে। পানামা খাল এখন চীনের নিয়ন্ত্রণে। বিষয়গুলো মেনে নেয়া যায় না।’
ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে শীতল দ্বীপটিতে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তাপ। সেনার মাধ্যমে গ্রিনল্যান্ড দখল করা যাবে না বলে বিশ্বাস দ্বীপটির বেশিরভাগ বাসিন্দার। যদিও ভিন্নমতও মিলেছে। গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয় বলে জানিয়েছেন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির অর্থমন্ত্রী। এছাড়াও দখলের চিন্তা ভালো পরিকল্পনা নয় বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড বিষয়ক ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি ভালো নয়। যদিও এটিকে এত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। আমার মতে এমন কিছুই হবে না। তাই অযৌক্তিক প্রসঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করা উচিত নয়।’
একজন গ্রিনল্যান্ডের নাগরিক বলেন , ‘ট্রাম্প বাড়াবাড়ি করছেন। সেনা অভিযানের মাধ্যমে গ্রিনল্যান্ড দখলের পরিকল্পনা কাজ করবে না।’
গ্রিনল্যান্ড পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ। অথচ আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে ডেনমার্কের মতো ছোট একটি দেশ। আসলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির সঙ্গে গ্রিনল্যান্ডের একীভূত হওয়া প্রয়োজন।
গ্রিনল্যান্ডের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জোটের মুখপাত্র জানান, গ্রিনল্যান্ডের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানো উচিত। দ্বীপ দখলের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সেনা পাঠালে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইইউর সদস্যরাষ্ট্রগুলো সম্মিলিতভাবে বিষয়টি প্রতিহত করবে বলেও জানান তিনি।
ইইউ কমিশনের মুখপাত্র পাওলা পিনহো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সামরিক আগ্রাসন চালালে গ্রিনল্যান্ডের জন্য আর্টিকেল ৪২.৭ প্রযোজ্য হবে। তবে আমি এখন বিষয়টি নিয়ে বলতে চাচ্ছি না। এমনকি ইউক্রেনের সঙ্গে গ্রিনল্যান্ডের পরিস্থিতির তুলনাও করবো না।’
ইউরোপীয় সীমান্তে কোনো দেশের আগ্রাসন মেনে নেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জঁ নোয়েল ব্যারোর ধারণা, শিগগিরই বিতর্কিত পরিকল্পনা থেকে সরে আসবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।