হারিকেন হেলেনের ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার উপকূলের বাসিন্দারা। ক্যাটাগরি ৪ মাত্রার হারিকেন হেলেন আঘাত হানার দুই সপ্তাহের কম সময়ে আবারও ৫ মাত্রা হারিকেন মিল্টন চোখ রাঙাচ্ছে। বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ সরিয়ে এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি মেক্সিকো উপসাগরের মানুষ।
মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে হারিকেন মিল্টন ক্যাটাগরি ৪ থেকে ৫ এ পরিণত হয়। স্থানীয় সময় বুধবার ভয়ংকর রূপ নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলে। বর্তমানে ঘণ্টায় ২৮৫ কিলোমিটার গতিতে ফ্লোরিডার দিকে ধেয়ে আসছে হারিকেনটি।
মার্কিন হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, উপকূলে আঘাত হানার পর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে মিল্টন।
মার্কিন জাতীয় হারিকেন সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর জেমি রোম বলেন, 'ফ্লোরিডার অংশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে। এ সময় বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিতে পারে। গাছ উপড়ে এবং ঝড়ো বাতাসে ব্যাপক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। ভেঙে পড়তে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থাও।'
হারিকেন মিল্টনের প্রভাবে এরই মধ্যে মেক্সিকো উপকূলে শুরু হয়েছে ঝড়ো হাওয়া ও প্রবল বৃষ্টি। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র ও কার্গো বন্দর। বাসিন্দারা নিত্যপণ্য সংগ্রহের জন্য দোকানে ভিড় জমিয়েছেন।
বাসিন্দাদের মধ্যে একজন জানান, 'হারিকেন মিল্টনের জন্য আমরা নিজেদের প্রস্তুত রাখছি। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিরাপদে স্থানে রেখেছি। খাবার, পানি ও মোমবাতি সংগ্রহ করেছি।'
আরও একজন জানান, রেস্তোরাঁর ভেতরে যেন পানি ঢুকতে না পারে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। বাসিন্দাদের সহায়তায় আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ফ্লোরিডায় আঘাত হানার সময় ছয় ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্যাটাগরি পাঁচের হারিকেন মিল্টন আটলান্টিকের ১০টি হারিকেনের মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন ফ্লোরিডার বাসিন্দারা। প্রস্তুত রাখা হয়েছে কয়েকশ অ্যাম্বুলেন্স। স্থগিত করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরের কার্যক্রম। নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন ৭ হাজার ফেডারেল কর্মী।
উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস জানান, 'আমি ফ্লোরিডার সমস্ত বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। অনুগ্রহ করে আপনারা স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলুন। হারিকেন মিল্টন খুব ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। আপনাদের কী কী প্রয়োজন তার সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।'
হারিকেন মিল্টনের বিপর্যয় এড়াতে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে গোটা একটি স্টেডিয়াম। মাঠের মধ্যে বসানো হয়েছে শত শত বিছানা। প্রায় ১০ হাজার মানুষের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে। হারিকেন হেলেন
এদিকে ফ্লোরিডার ট্যাম্পা শহরের মহাসড়কে তৈরি হয়েছে গাড়ির দীর্ঘ সারি। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বাসিন্দারা।
সম্প্রতি হারিকেন হেলেনের আঘাতে প্রাণহানি ঘটেছে আড়াই শতাধিক মানুষের। ক্ষয়ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি মার্কিন ডলারের।
২০০৫ সালে ৫ মাত্রার হারিকেন ক্যাটরিনার আঘাতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণ হারান প্রায় দেড় হাজার মানুষ। আটলান্টিকে হারিকেন মৌসুম জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। চলতি বছরে প্রায় সাতটি হারিকেন আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্র উপকূলে।