আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ দেখে বোঝার উপায় নেই এটি সিরীয় সেনাদের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলোর একটি। শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কসহ এর আশেপাশে অঞ্চলে সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে অন্তত ৬১টি মিসাইল হামলা চালায় ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। বিমান হামলা হয়েছে কুনেইত্রা প্রদেশেও। বন্ধ হয়ে গেছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। অচল সড়কপথও।
সিরিয়ার ওপর ইসরাইল যেভাবে চড়াও হয়েছে তাতে করে বিপাকে পড়েছে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার তথ্য বলছে, লাতাকিয়া বন্দর অভিমুখে সাঁজোয়া যান পাঠাচ্ছে বর্তমান সরকারের প্রতিরক্ষাবিভাগ। আসাদ সমর্থকদের নির্মূলের পাশাপাশি প্রশাসনকে ভাবতে হচ্ছে তুরস্ক সমর্থিত 'সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি' কিংবা কুর্দিশ সমর্থিত 'সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস'-কে নিয়েও। এরমধ্যে সিরিয়ার বর্তমান কমান্ডার ইন চিফ এবং আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের নেতা আহমেদ আল-শারা মন্তব্য করেছেন, ইসরাইল যে আগ্রাসন চালাচ্ছে তা অবশ্যই নিন্দার যোগ্য, কিন্তু সিরিয়া নতুন কোনো প্রতিপক্ষের সংঘাতে জড়াতে চায় না।
দীর্ঘদিন নীরবতা পালনের পর এবার সিরিয়া ইস্যুতে মুখ খুলেছেন লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ প্রধান নাঈম কাসেম। বলছেন, সিরিয়ায় সামরিক সহায়তা পাঠানোর সব পথ এখন বন্ধ। তবে, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর দামেস্ক-বৈরুত সম্পর্ক আরও স্বাভাবিক হতে পারে।
হিজবুল্লাহ প্রধান নাঈম কাসেম বলেন, ‘আমরা সিরিয়ার পক্ষে ছিলাম কারণ তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। লেবানন ও ফিলিস্তনিদের প্রতি তাদের সমর্থন আছে। কিন্তু এখন সিরিয়ায় নতুন শক্তির উত্থান হয়েছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছি না। তাই তাদের বিষয়ে এখনো আমাদের অবস্থান পরিষ্কার নয়।’
এদিকে, আসাদ পরবর্তী সিরিয়ার ভবিষ্যৎ ইস্যুতে জর্ডানে বৈঠক করেছে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কসহ ৮ আরব দেশের প্রতিনিধিদল। বাহারাইন, মিশর, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, লেবানন, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিল জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে, সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানা তারা। আর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, সিরিয়ার আসাদবিরোধী বিদ্রোহী সংগঠন তাহরির আল-শামের সাথে সরাসরি যোগাযোগ শুরু করেছে ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘তাহরির আল-শাম ও অন্যান্য বিদ্রোহী সংগঠনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। মার্কিন সংবাদকর্মী অস্টিন টাইসকে খুঁজে বের করে ফিরিয়ে আনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আগেও সিরীয় নাগরিকদের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। এই বৈঠকের পর সিরিয়া ইস্যুতে আমাদের নীতিগত অবস্থানে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে, সে বিষয়েও তাদের জানানো হয়েছে।’
বৈঠকে পর ১৩ দেশের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্ষমতার পালাবদল হলেও নতুন সরকারকে অবশ্যই সিরীয় নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। পশ্চিমা কূটনৈতিক মহল মনে করে, সিরিয়ায় অন্তর্ভুক্তিমূলক এমন একটি অসাম্প্রদায়িক সরকার ব্যবস্থা প্রয়োজন যেখানে সব মতাদর্শের মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে।
জর্ডানে আরব নেতাদের সাথে সফল বৈঠকের পরেও বাশার আল আসাদের পতনের পত তুরস্কের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আন্তর্জাতিক মহলে। যদিও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, সরকার পতনের পর বিদ্রোহীদের সাথে সংঘাত চালিয়ে যেতে সম্মত হয়নি রাশিয়া ও ইরান। আর মস্কো বলছে, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের ফ্রন্ট লাইন থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হলেও দেশটিতে রুশসেনাদের প্রধান দু'টি মিলিটারি বেইজ এখনও অক্ষত আছে।