মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

হিজবুল্লাহকে আর্থিকভাবে আঘাতের প্রস্তুতি ইসরাইলের

হিজবুল্লাহর আর্থিক কাঠামোতে আঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। রোববার (২০ অক্টোবর) এ ঘোষণার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই কমপক্ষে ১০টি বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে লেবাননের রাজধানী। হিজবুল্লাহর পেছনে কীভাবে অর্থ ঢালছে ইরান, সেসব তথ্য প্রকাশ এবং ইরানেও হামলার হুমকি দিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।

ইসরাইলের রোববার রাতের হামলায় জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে রূপ নেয় লেবাননের রাজধানী বৈরুতের একাংশ। এসময় অন্তত ১০টি বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো নগরী। হামলা থেকে বাদ পড়েনি একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিও।

দফায় দফায় হামলার ঘণ্টাখানেক আগেই ইসরাইলের এক ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যরাতে ঘরবাড়ি ছাড়েন হাজারও মানুষ। তাই হামলায় প্রাণহানি তেমন না হলেও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে রাস্তায় ছিল আতঙ্কিত মানুষের ভিড় আর তীব্র যানজট।

সীমান্তে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের মুখোমুখি না হয়ে ইসরাইল বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছে বলে ক্ষোভ বাড়ছে বৈরুতের সাধারণ মানুষের মধ্যে।

স্থানীয় একজন বলেন, 'একদিন আগেই অস্ত্রের মজুতে হামলা চালালো। তিন-চার দিনেই সেসব অস্ত্র ফিরে এসেছে যে আবার হামলা করতে হলো? অবশ্যই না। তাদের পরিকল্পনা শুধু সব ধ্বংসের। তাই তারা দক্ষিণ সীমান্তে অস্ত্রের লড়াইয়ে মুখোমুখি না হলে বেসামরিক মানুষকে আক্রমণ করছে।'

অন্যএক স্থানীয় বলেন, 'মনে হয় যদি মেরে ফেলতে পারতাম ওদের! এরা মরবেও। এদের দাম্ভিকতা দেখুন, অথচ সত্য স্বীকারের ক্ষমতা নেই। খুব দুর্ভাগ্যজনক যে ৪২ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যায় বিশ্ববাসী নড়ে না। ওদিকে নিউইয়র্কে একটা বিড়ালের গায়ে আঁচড় লাগলেও বিশ্ব তোলপাড় হয়ে যায়।'

গাজায় স্বাধীনতাকামীদের সমর্থনে ইসরাইলি ভূখণ্ডে এক বছরের বেশি সময় ধরে রকেট হামলা চালিয়ে আসছে লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহ। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা আর লেবাননে দিন দিন সামরিক অভিযান জোরদার করছে ইসরাইল। তবে গাজার শাসকদল হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার পর বছরব্যাপী সংঘাতে বিরতির আলোচনা আলোর মুখ দেখবে কি না, উঠছে সে প্রশ্ন।

ইরাকে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ কাজেম আল-সাদেঘ বলেন, 'প্রতিরোধকামীরা আজ আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, প্রত্যেক শহীদের রক্তের বদলা নেবে। ইহুদিদের অস্তিত্ব থাকবে না। শহীদ সিনওয়ার সুড়ঙ্গে লুকিয়ে ছিলেন বলে দাবি ছিল ইহুদিদের, অথচ তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে লড়ছিলেন। আর আজকে নেতানিয়াহু শয়তানটাকে আমরা দেখছি সুড়ঙ্গের ভেতর।'

মার্কিন গোয়েন্দাদের তথ্য, ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ নিজেদের অর্থ ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কাজ সেরে থাকে আল-কার্দ আল-হাসানের মাধ্যমে। লেবাননজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির ৩০টি শাখা আছে, যার মধ্যে ১৫টিই অবস্থিত বৈরুতের ঘনবসতিপূর্ণ মধ্যাঞ্চল ও আশপাশের এলাকায়। এ অবস্থায় হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা কার্যালয় আর ভূগর্ভস্থ অস্ত্রভাণ্ডারে হামলার পরদিনই আল-কার্দ আল-হাসান অ্যাসোসিয়েশনেও হামলার ঘোষণা দেয় ইসরাইলি সেনাবাহিনী।

ইসরাইলী সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, 'হিজবুল্লাহর সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ইরান কীভাবে অর্থ ঢেলেছে, বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করেছে, সেসব চিত্র সামনের দিনগুলোতে উন্মোচন করবো আমরা। বিভিন্ন সমিতি আর সাহায্য সংস্থার আড়ালে নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে দেশটি। এরপর দিনরাত হামলা হবে শুধু।'

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত লক্ষ্য করেও হামলার প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলে আসছে ইসরাইল। যদিও ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইরানের জ্বালানি আর পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা করা থেকে বিরত আছে তেলআবিব।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর