এশিয়া
বিদেশে এখন
0

কাজাখস্তানে বিমান বিধ্বস্ত: জরুরি অবতরণের স্থান বদলানোই কী দুর্ঘটনার কারণ?

কাজাখস্তানে যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কাজাখ প্রসিকিউটর অফিসের সাথে যৌথভাবে কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আজারবাইজান এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আজারবাইজানের প্রসিকিউটর অফিসের প্রতিনিধি জানান, দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে এত আগেভাগে কোনো মন্তব্য করা উচিত হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার ছাড়াও পাখির ঝাঁকের সাথে বিমানের আঘাত লাগার কারণে পাইলট দ্বিতীয় দফায় জরুরি অবতরণের স্থান বদলানোর সিদ্ধান্ত নেন। আর এ থেকেই দুর্ঘটনার সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিমান দুর্ঘটনায় যাত্রীদের বেঁচে ফিরে আসার সম্ভাবনা যেখানে খুবই ক্ষীণ সেখানে কাজাখস্তানে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের অন্তত অর্ধেক সংখ্যক যাত্রীকে জীবিত উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করেছে রুশ গণমাধ্যম আরটি।

বুধবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে ৬২ যাত্রী ও ৫ ক্রুকে নিয়ে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া বিমানটি কাজাখস্তানের জরুরি অবতরণের সময় ভূমিতে আছড়ে পড়ে ও বিধ্বস্ত হয়।

প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে, বিবিসি জানায়, এম্বেয়ার ওয়ান নাইন্টি সিরিজের 'জে টু- এইট টু ফোর থ্রি' মডেলের বিমানটির যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ১শ।

যাত্রী কম থাকলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের সুবিধামতো আসনবিন্যাস পরিবর্তন করে থাকে। দুর্ঘটনার পর ভিডিওতে দেখা যায়, বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির সামনের অংশ পুরোপুরি ধ্বসে গেলেও পেছনের অংশ অক্ষত ছিল। বিবিসি'র ধারণা, জীবিত যাত্রীদের অধিকাংশই বিমানের পেছনে আসন পেয়েছিলেন।

যদিও যাত্রী বিন্যাসের আনুষ্ঠানিক নথি ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন হাতে না পাওয়ায় এ নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ আজারবাইজানের প্রসিকিউটর অফিসের প্রতিনিধি। আর সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কাজাখস্তানকে সব ধরনের সহায়তা করতে সম্মত হয়েছে আজারবাইজানি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।

আজারবাইজান প্রসিকিউটর অফিসের প্রতিনিধি কায়ানান জেইনালভ বলেন, ‘কাজাখ প্রসিকিউটর অফিসের যৌথ উদ্যোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার সব দিক খতিয়ে দেখা হবে। কোনো সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেয়া হচ্ছে। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে এত আগেভাগে কোনো মন্তব্য করা উচিত হবে না।’

কাজাখস্তানের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে বিমানটিকে কাজাখস্তান থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে আকতাউ এলাকায় জরুরি অবতরণ করতে বলা হয়।

ঘন কুয়াশা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রথম ধাপে বিমানের রুট বদলানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো বলে জানায় রুশ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরুরি অবতরণের সময় পাখির ঝাঁকের সাথে ধাক্কা লাগায় বিমান অবতরণের স্থান দ্বিতীয় দফায় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন পাইলট, আর সেখান থেকেই দুর্ঘটনার সূত্রপাত।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ স্টিফেন রাইট বলেন, ‘পাইলট প্রথমে জরুরি অবতরণের ঘোষণা দেন। পরে পাখির ঝাঁকের কারণে ঝামেলায় পড়ে অন্যত্র অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। এ অঞ্চলের আকাশে পাখির ঝাঁক নতুন কিছু নয়। বিমান ওঠা-নামার সময় প্রায়ই এদের দেখা যায়। হয়ত সেই কারণে দ্বিতীয়বার ল্যান্ডিং বদলের সিদ্ধান্ত নেন পাইলট। সেখান থেকেই এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।’

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, এম্বেয়ার ওয়ান নাইন্টি সিরিজের বিমানে এখনও পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বল্প দূরত্ব আর ছোট রানওয়েতে অবতরণের জন্য এই বিমানের সুনামও আছে যথেষ্ট।

তাই, শেষ মুহূর্তে জরুরি অবতরণের স্থান পাল্টে ফেলা পাইলটের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হয়ে থাকতে পারে- এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।

এএইচ