এশিয়া
বিদেশে এখন
0

পেন্ডুলামের মতো দুলছে মণিপুর রাজ্যের ভাগ্য

পেন্ডুলামের মতো দুলছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যের ভাগ্য। রাজ্যটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষ রূপ নিয়েছে গণ-আন্দোলনে। দুই জনগোষ্ঠীর চলমান সংঘাতের জেরে এবার কেন্দ্র থেকে আলাদা হওয়ারও দাবি উঠেছে রাজ্যের বিভিন্ন মহলে। তাদের মতে, মণিপুরে রাজ্য সরকার থাকলেও, তাদের হাত-পা বাধা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।

ভারতের সেভেন সিস্টার্সের রাজ্য মণিপুরে ৩০টির বেশি উপজাতির বসবাস। এদের মধ্যে কুকিসহ প্রায় ৯০ শতাংশ জাতিগোষ্ঠী বাস করে পাহাড়ি অঞ্চলে। যাদের বড় একটি অংশ এসটি বা সরকারিভাবে সুবিধাবঞ্চিত আর্থসামাজিক জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত।

অন্যদিকে রাজধানী ইম্ফলসহ সমতল অঞ্চলে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই জনগোষ্ঠী। বাকিদের তুলনায় রাজনৈতিকভাবেও তারা খুব ক্ষমতাশালী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও মেইতেই জাতির।

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কুকিসহ বেশ কয়েকটি জাতিগোষ্ঠী মিশনারি সহায়তায় পড়াশোনা ও চাকরিতে মেইতেইদের তুলনায় খুব দ্রুত উন্নতি করেছে। এর ফলে মেইতেই সম্প্রদায়ের একাংশ সরকারি কোটা সুবিধার আওতায় আসার দাবি জানায়।

মণিপুর হাইকোর্ট এ ব্যাপারে সায় দিলে বিপত্তি বাধে অন্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইরা সরকারি সুবিধায় আসলে কোণঠাসা হওয়ার ভয়ে সহিংস বিক্ষোভে নামে কুকি বিদ্রোহীরা।

২০২৩ সালের মে মাসে শুরু হওয়া সংঘাতে প্রাণ হারায় দুই শতাধিক মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দা। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিল করলেও, শান্তি ফেরেনি মণিপুরে। গেল ১ সেপ্টেম্বর মেইতেইদের অঞ্চল লক্ষ্য করে কুকিদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উত্তেজনা পৌঁছায় চরমে। যা ইতোমধ্যে রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

কুকি ও মেইতেইদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকে প্রধান করে একটি গঠন করে মোদি সরকার। তবে সেই শান্তি কমিটিকে বর্জন করে মেইতেই ও কুকি দুই পক্ষই।

এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর যুদ্ধ বিরতি কার্যকর থাকায় রাজ্য সরকার চাইলেও তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণ অভিযানে নামতে পারছে না। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েক দফা পদক্ষেপের পরও বন্ধ হয়নি সহিংসতা।

গেল বছর সহিংসতা শুরু হলে পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে হাজার খানেক অত্যাধুনিক অস্ত্র লুট করে বিদ্রোহীরা। যেগুলো এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারসহ আশেপাশের রাজ্য থেকেও মণিপুরে অস্ত্রের বড় চালান আসার অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরুপায় হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা চেয়েছে রাজ্য সরকার।

ভারতে সেভেন সিস্টার্সের রাজ্যগুলোতে আধিপত্য ধরে রেখেছে মোদি সরকার। মণিপুরের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিশ্লেষকদের মতে, রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর হিন্দু আধিপত্যবাদী চিন্তাধারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

এএইচ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর