হেভিওয়েট চার নেতার দপ্তরে রদবদল না আনা, এনডিএ জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের সুযোগ দেয়া আর অঞ্চলভেদে ক্ষমতায় ভারসাম্য- এই তিন নীতি মাথায় রেখে গেল সোমবার মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেছেন নরেন্দ্র মোদি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে অমিত শাহ, প্রতিরক্ষায় রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে এস জয়শংকর আর অর্থমন্ত্রীর চেয়ারে নির্মলা সীতারামন- ফোর হর্সম্যানকেই পুনর্বহাল করেছে মোদি সরকার। আবারও সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাবেন বিজেপি'র নিতিন গাদকারি। রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পড়েছে অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাঁধেই। সেই সঙ্গে সামলাবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
খাদ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক খনিজ মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা সামলাবেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী হচ্ছেন গুজরাটের মনসুখ লক্ষ্মণভাই মান্ডাভিয়া। এছাড়া প্রথমবারের মতো লোকসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত পীযূষ গোয়ালকে দেয়া হয়েছে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। পর্যটন ও সংস্কৃতি দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন গাজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী হয়েছেন কিনজারাপু রামমোহন নাইড়ু, মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ভার অন্নপূর্ণা দেবীর ওপর।
বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় এনডিএ জোটের শরিক দলগুলোকে জায়গা দিতে হয়েছে সরকারের ১১টি দপ্তরে। বিহারের লোক জনশক্তি দলের প্রধান ও অভিনেতা চিরাগ পাসওয়ান পেয়েছেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
আরেক জোট শরিক বিহারের হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা-সেক্যুলারের জিতেন রাম মাঞ্জিকে দেয়া হয়েছে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রণালয়। কিংমেকারস নীতিশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জনতা দল ইউনাইটেডের রাজীব রঞ্জন সিং পেয়েছেন পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি মৎস্য, পশু পালন ও ডেইরি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
এছাড়া মন্ত্রিসভার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন কর্ণাটকের আঞ্চলিক জনতা দলের প্রধান এইচ ডি কুমারাস্বামী, জেডি-ইউর নেতা রাজীব রঞ্জন, তেলেগু দেশম পার্টির কিঞ্জারাপু রাম মোহন নাইড়ু।
শপথ গ্রহণের দিন সব ধর্মকে এক ভাবার যে বাণী দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি তার প্রতিফলন একেবারেই চোখ পড়েনি এবারের মন্ত্রিপরিষদে। নবনির্বাচিত মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি একজন মুসলিমও। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে মোদির মন্ত্রিসভা এতটা মুসলিমবর্জিত ছিল না। এবারের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ৭৮ জন মুসলমান প্রার্থী। জয়ী হওয়া ২৪ জনের মধ্যে ২১ জনই লড়েছেন 'ইন্ডিয়া' জোটের হয়ে।
নতুন মন্ত্রিসভায় বাদ পড়েছেন গতবারের আলোচিত মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। নির্বাচনে জিতেও মন্ত্রণালয় পাননি হিমাচল প্রদেশের অনুরাগ ঠাকুর, গুজরাটের পার্শোত্তম রূপলা। এছাড়া টানা দুইবারের মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও কেরালার রাজীব চন্দ্রশেখরের জায়গা হয়নি মন্ত্রিসভায়।
এবারের মন্ত্রিসভায় কমেছে নারী সদস্যের সংখ্যাও। আগের মন্ত্রিসভায় ১০ জন নারী সদস্য থাকলেও এবারের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন ৭ জন। অনুষ্ঠানে নির্মলা সীতারামন, অন্নপূর্ণা দেবী, সাবিত্রী ঠাকুর, নিমুবেন বামভানিয়া, রক্ষা খডসে, শোভা করন্দলাজে এবং অনুপ্রিয়া প্যাটেলকে দেখা গেলেও বাদ পড়েছেন স্মৃতি ইরানিসহ ভারতী পাওয়ার, সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি, দর্শনা জরদোশ, মীনাক্ষী লেখি ও প্রতিমা ভৌমিক।
সোমবার (১০ জুন) মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে 'প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা' প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র মানুষদের জন্য ৩ কোটি বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে 'টিম মোদি'। শরিক-নির্ভর তৃতীয় ইনিংসে মোদি সরকার কতটা ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে- এখন সেদিকেই নজর থাকবে বিশ্ববাসীর