থাইল্যান্ডে লিথিয়ামের মজুত আবিষ্কার

এশিয়া
বিদেশে এখন
0

বিশ্বের অন্যতম বড় লিথিয়ামের মজুত আবিষ্কারের দাবি করেছে থাইল্যান্ড। তবে সরকারি এ ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে এর সত্যতা নিয়ে।

থাই সরকারের উপ-মুখপাত্র রুডক্লাও ইন্টাওং সুওয়াঙ্কিরি দু'দিন আগে জানান, দুটি এলাকায় লিথিয়ামের মজুত মিলেছে। তবে সেটা কতটা ব্যবহারযোগ্য তা নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হলেও থাইল্যান্ডের জন্য এটি নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। কারণ এর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারি তৈরিতে থাইল্যান্ড আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ পাবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা বিশ্বে লিথিয়ামের মজুত আছে আট কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন। মজুতের শীর্ষে বলিভিয়া, আর্জেন্টিনা ও চিলি।

শীর্ষ দশে আরও আছে অস্ট্রেলিয়া, চীন, জার্মানি, কঙ্গো, কানাডা, মেক্সিকো ও চেক প্রজাতন্ত্র। দুই খনিতে এক কোটি ৪৮ লাখ টন লিথিয়ামের মজুত আবিষ্কারের দাবি সত্যি হলে চিলিকে পেছনে ফেলে এক লাফে থাইল্যান্ড তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে।

তবে থাই সরকারের এ দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। থাইল্যান্ডের ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন এক কোটি ৪৮ লাখ টন বিশুদ্ধ লিথিয়াম নয়। বরং খনিজ পাথরের ওজন, যা থেকে শূন্য দশমিক চার-পাঁচ শতাংশ লিথিয়াম সংগ্রহ করা সম্ভব।

এ হিসাবে পাথর খনন করে থাইল্যান্ডের ফাং নাং প্রদেশের দুই খনিতে উত্তোলনযোগ্য লিথিয়াম রয়েছে ৬৭ হাজার টনেরও কম। ভূতাত্ত্বিকদের এ হিসাব সত্য হলে লিথিয়ামের মজুতে থাইল্যান্ড বিশ্বের ২২তম দেশ হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় পরিবেশবান্ধব যানচলাচলের মাধ্যম হিসেবে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চাহিদা বাড়ায় লিথিয়ামেরও দর বেড়েছে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, গাড়িসহ বৈদ্যুতিক অনেক পণ্যের রিচার্জেবল ব্যাটারি তৈরিতে বিকল্প নেই বলে 'একবিংশ শতাব্দীর তেল' খ্যাত লিথিয়ামের আকাশচুম্বী চাহিদা রয়েছে। বিশ্বজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জেরে সাদা ধাতুটির দামও প্রায় দুবছর ধরে ঊর্ধ্বমুখী।

এমন পরিস্থিতিতে গেল বছর আগস্টে দায়িত্ব নেয়া থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণে দেশকে আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছেন। গেল মাসেই চীনভিত্তিক দুটি বহুজাতিক বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ সংস্থা থাইল্যান্ডে এ খাতে সাড়ে ছয় কোটি ডলার বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক মিনারেল ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এক বছরে লিথিয়ামের প্রায় ১৮৩ শতাংশ দাম বেড়েছে। ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে ২০২৪ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে লিথিয়ামের তীব্র সংকট দেখা দেবে বলে আভাস দিয়েছে এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল।

বর্তমানে বিভিন্ন দেশে লিথিয়াম উত্তোলনে চলমান ৫৩টি প্রকল্পের বার্ষিক খরচ তিন হাজার ৭৮০ কোটি ডলার। আর তা আরও বেড়ে গেলে ২০৩০ সাল নাগাদ চাহিদার চেয়ে ছয় লাখ টনের বেশি ঘাটতি থাকবে লিথিয়াম সরবরাহে।