তাইওয়ান ইস্যুতে অস্থির জাপান-চীন, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

জাপান ও চীনের পতাকা
জাপান ও চীনের পতাকা | ছবি: সংগৃহীত
0

তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে জাপান ও চীনের মধ্যে হওয়া আগের চুক্তিগুলোকে লঙ্ঘন করছে টোকিও। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করেছে চীনা গণমাধ্যম সিজিটিএন। এদিকে, চীনের স্বাভাবিক মহড়া ও প্রশিক্ষণ কার্যে ব্যাঘাত না ঘটাতে জাপানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং। শনিবার হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে চীনের বিরুদ্ধে জাপানের সামরিক বিমান লক্ষ্য করে রাডার নজরদারির অভিযোগ তোলে টোকিও।

নভেম্বরে তাইওয়ান ইস্যুতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির বিতর্কিত বক্তব্যের পর থেকে তলানিতে টোকিও-বেইজিং সম্পর্ক। এটি নিয়ে উভয় দেশই বেশ কয়েক দফায় নিজ দেশের নাগরিকদের একে অপরের ভূখণ্ড ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করে।

বিতর্কের জেরে চীনে আটকে যায় কয়েকটি জাপানি চলচ্চিত্রের মুক্তিও। এছাড়া, শনিবার নতুন করে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে চীনের বিরুদ্ধে জাপানের সামরিক বিমান লক্ষ্য করে রাডার নজরদারির অভিযোগ তোলে টোকিও। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে নিন্দা জানিয়েছে জাপান।

তবে ভিন্ন অভিযোগ করে বেইজিং। সোমবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাপানকে চীনের স্বাভাবিক মহড়া ও প্রশিক্ষণে ব্যাঘাত না ঘটানোর আহ্বান জানান।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, ‘চীন আন্তর্জাতিক আইন মেনেই সামরিক মহড়া পরিচালনা করে। আর বিমান উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের সময় অনুসন্ধানী রাডার সক্রিয় করা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এটাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে জাপান। যা ঠিক নয়।’

এদিকে, জাপান- চীন চলমান উত্তেজনার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যকার স্বাক্ষরিত আগের চুক্তিগুলোকে মূল্যায়ন করছে চীনা গণমাধ্যমগুলো। সম্প্রতি দেশটির গণমাধ্যম সিজিটিএন জাপানের বিরুদ্ধে চুক্তিগুলোর লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।

মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অক্ষ শক্তির তালিকায় জার্মানির পরেই ছিল জাপান। একারণে নাৎসি বাহিনীর পতনের পর ও জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক হামলার জেরে মুখ থুবড়ে পড়ে জাপান। এরপর যুদ্ধপরবর্তী টোকিওর সঙ্গে চীনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সম্পর্ক জোরদারের আইনগত ভিত্তি তৈরি করে কায়রো ও পটসডাম ঘোষণা।

১৯৪৩ সালের কায়রো ঘোষণা অনুযায়ী, জাপান চীনের কাছে মাঞ্চুরিয়া, ফর্মোসা ও পেঙ্কাডোরেসের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর দুই বছর পর জার্মানির পটসডামে বৈঠকে বসে তৎকালীন বিশ্ব নেতারা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, কায়রো ঘোষণার সিদ্ধান্তগুলো মেনে চলবে জাপান। পাশাপাশি জাপানের সার্বভৌমত্ব হোনশু, হোক্কাইডো, কিউশু, শিকোকু দ্বীপপুঞ্জ ও আলোচনায় যে ছোট ছোট দ্বীপগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

এছাড়া, ১৯৭২ সালে চীন-জাপান ঐতিহাসিক চুক্তিতে চীন জাপানের কাছ থেকে বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ক্ষতিপূরণও মওকুফ করে। পাশাপাশি দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক জোরা লাগাতে উদ্যোগও নেয় তৎকালীন দুই দেশের নেতারা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাকাইচি প্রশাসন এই নীতিগুলোর লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ সিজিটিএনের।

গুও জিয়াকুনএছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপানের যৌথ সামরিক মহড়া শুরুর যে চিন্তাভাবনা এটিকেও ভালোভাবে নিচ্ছে না বেইজিং। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার এটিকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি বলে জাপানকে আগের চুক্তি মেনে চলার আহ্বানও জানায় চীন ।

এএইচ