৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের ১শ' ঘণ্টা পেরিয়ে যাবার পর নেইপিদোতে হোটেলের ধ্বংসস্তুপ থেকে জীবিত উদ্ধার এক ব্যক্তি।
এর আগে ভূমিকম্পের চারদিন পর একই শহরে ধ্বংসস্তুপ থেকে জীবিত বের করে আনা হয় ৬৩ বছরের এক নারীকে।
১শ' বছরের বেশি সময়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে প্রাচীন বৌদ্ধমন্দির থেকে শুরু করে আধুনিক বহুতল ভবনও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১০ হাজার ভবন ধসে পড়ায় আশ্রয় হারিয়ে আর আফটারশক আতঙ্কে পাঁচদিন ধরে রাস্তায় তাঁবু খাটিয়ে থাকছে লাখ লাখ মানুষ।
মিয়ানমারে ইউনিসেফের উপ-প্রধান জুলিয়া রিস বলেন, ‘যে দৃশ্য দেখেছি, তা ভয়াবহ। পুরো এলাকা মাটিতে মিশে গেছে। শিশুসহ পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে ঘুমাচ্ছে। তাদের ফেরার কোনো জায়গা নেই।’
মিয়ানমারের ডব্লিউএফপির যোগাযোগ প্রধান মেলিসা হেইন বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ আহত ও নিখোঁজ। ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা ভয়ঙ্কর।’
২০২১ সালে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া ইমাম সোয়ে নাই ও জেনেছেন, ভূমিকম্পে ১৭০ জন স্বজন, বন্ধু, সাবেক সহকর্মীকে হারিয়েছেন তিনি। শুক্রবারের জুম্মার নামাজের সময় ভূমিকম্প হয়েছিল বলে মসজিদের ভেতরে প্রাণ গেছে বেশিরভাগ মুসল্লির।
এমন নানা বেদনার চিত্র আর ধ্বংসস্তুপ থেকে হাজার হাজার মরদেহ বেরিয়ে আসতে থাকার মধ্যে সাময়িক অস্ত্রবিরতির দাবি জানায় চার বছরের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্তপ্রায় দেশটির তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাই জানিয়েছেন, জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখবে সেনাবাহিনী। নিউইয়র্ক টাইমসের খবর, সাহায্যকারী চীনা রেড ক্রসের ত্রাণবাহী গাড়িবহরে মিয়ানমারের সেনারা গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ বিদ্রোহীদের।
এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা আর আশ্রয় সংকটে ভুগছেন বাসিন্দারা। বলছে দাতব্য সংস্থা রেডক্রস।
মিয়ানমারে রেড ক্রসের প্রধান প্রতিনিধি আর্নড ডি ব্যাক বলেন, ‘মানুষ রাস্তায় ঘুমাচ্ছে। চিকিৎসা সেবা নেয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু সব ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বলে হাসপাতাল বা প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র- কিছুই ব্যবহার উপযোগী নেই। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই বলে পানি সরবরাহ আর পরিশোধন ব্যবস্থাও অচল।’
গেলো ক'দিনে কমপক্ষে ২৬৪টি ‘আফটার শক’ হয়েছে মিয়ানমারে, কেঁপেছে প্রতিবেশী থাইল্যান্ডও। রাজধানী ব্যাংককে ধসে পড়া নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের ধ্বংসস্তুপে এখনও নিখোঁজ অর্ধশতাধিক।