সীমান্ত পার হলেই শুরু নজরদারি, ঘণ্টায় ঘণ্টায় তল্লাশির ভোগান্তি, ধর্মীয়গ্রন্থ নেয়ায় বিধিনিষেধ, ছবি তুলতে গেলে নিষেধাজ্ঞা- ট্রাভেল ব্লগার থেকে শুর করে সাধারণ পর্যটকদের অভিযোগ, ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য উত্তর কোরিয়া যতটা আগ্রহের তার চেয়েও বেশি আতঙ্কের এক নাম।
তার ওপর কোভিড মহামারির পর বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণে এক প্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পিয়ংইয়ং। সবশেষ ২০২৪ সালে উত্তর কোরিয়া ভ্রমণ করেন ৮০০ রুশ পর্যটক। তবে ২০২২ সাল থেকে দেশটি ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে এবং সীমান্ত খুলে দিতে শুরু করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দাবি, গেল ৫ বছরে রাশিয়ার এই দলটি ছাড়া কোনো ভিনদেশি পর্যটকদলকে দেশে প্রবেশ করতে দেয়নি উত্তর কোরীয় প্রশাসন।
গেল সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে একদল পর্যটককে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয় পিয়ংইয়ং। ২০ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোরিয়ার সীমান্তবর্তী শহর রাসনে ৫ দিনের একটি সফরের আয়োজন করে বেইজিংভিত্তিক ট্রাভেল কোম্পানি কোরিও ট্যুরস। যেখানে অংশ নিয়েছেন ১৩ জন বিদেশি পর্যটক।
কোরীয় ট্যুরস আরো জানায়, বিদেশি এই পর্যটক দলে যুক্তরাজ্য, কানাডা, গ্রিস, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ইতালির নাগরিক ছিলেন। এরা প্রত্যেকেই চীনে হয়ে সড়কপথে উত্তর কোরিয়ায় এসেছেন। সীমান্তবর্তী রাসন শহরটি মূলত বাণিজ্যিক হাব হিসেবে পরিচিত। ১৩ জনের ঐ দলটিকে রাসনের বড়বড় শিল্প কারখানা, সুপারশপ ও স্কুলকলেজ ঘুরিয়ে দেখায় কোরীয় ট্যুরস। দেখানো হয়, সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের বাবা ও দাদার ভাস্কর্য।
আগামী জুনে পূর্ব উপকূলে একটি বিশাল পর্যটন কেন্দ্র চালুর করার কথা ভাবছে কিম প্রশাসন। থিংক ট্যাংক, ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজিসের তথ্য বলছে, চীনো পর্যটকরা আবারও উত্তর কোরিয়া ভ্রমণ শুরু করলে তা দেশটির পর্যটন খাতের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে। কারণ, মহামারির আগে দেশটিতে পাড়ি দেয়া মোট আন্তর্জাতিক পর্যটকের ৯০ শতাংশেরও বেশি ছিল চীনা। মহামারির আগে বছরে অন্তত ৩ লাখ চীনা পর্যটক উত্তর কোরিয়া ভ্রমণ করতেন।
ভ্রমণ শিথিল করার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সংকটাপন্ন অর্থনীতির যোগাযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বরাবরই পর্যটনখাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে আসছে পিয়ংইয়ং। বিশেষ করে পরমাণু প্রোগ্রামের কারণে বিদেশি নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা দেশের তালিকায় অন্যতম উত্তর কোরিয়া। ফলে, পর্যটনখাতে বিনিয়োগ বাড়ালে দেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে আরও সচল হবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।